সামাজিক দূরত্বকে টাটা-বাই-বাই-সালাম: শেষ রক্ষা হবে তো ?

0

সামাজিক দূরত্বকে টাটা বাই বাই বলে দিলো বাঙালী! সোশ্যাল ডিসট্যান্সের বিশ্বব্যাপী যে ধারণা, বলা চলে, হেসে খেলেই উড়িয়ে দিল। দিতে পারল। সামাজিক দূরত্বকে দু’হাতে দূরে ঠেলে দিব্যি স্বরূপে ফিরল বাংলাদেশ! অবাক কাণ্ডবৈকি! এখন সবাই পরস্পরের কাছে আসছে। ঘন হচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় নেই করোনাভাইরাস বলতে কিছু এখনও আছে বা ছিল!

অথচ করোনা সংক্রমণ এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদদিন আসছে মৃত্যুর খবর। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭২৪ জন। অন্য অনেক দেশেও নতুন করে বাড়ছে সংক্রমণ। সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা জাগে ভারতের দিকে তাকিয়ে। পার্শ¦বর্তী দেশ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রকৃতি পরিবেশ সব কিছুতেই বাংলাদেশের সঙ্গে মিল। সেই দেশে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণ। বাংলাদেশেও কি আছড়ে পড়তে পারে দ্বিতীয় ঢেউ? বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েই চলেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার সময় কোথায়? করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি ছেড়ে ছুড়ে নিজের মতো চলছে বেশিরভাগ মানুষ। সামাজিক দূরত্বকে পারলে তারা ঝেটিয়ে বিদায় করে!

করোনাকালের অন্যতম প্রধান আলোচনা ছিল সোশ্যাল ডিসটেন্স বা সামাজিক দূরত্ব। গোটা দুনিয়া একেবারে শুরু থেকেই এ দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে আসছিল। এ কারণেই বিরাট বিরাট ক্ষতির কথা ভুলে সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা। ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়েছিল মানুষ। করোনা প্রতিরোধের ভ্যাকসিন নেই। চিকিৎসায় নানা সঙ্কট। এ অবস্থায় সংক্রমণ থেকে বাঁচার কার্যকর পথ ওই একটিই ছিলÑ সামাজিক দূরত্ব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সকল দেশ, দেশের সরকার ও চিকিৎসকরা সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনে চলার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেছিলেন।

পরবর্তীতে যেসব দেশের অবস্থা কিঞ্চিত ভাল বলে মনে হয়েছে সেসব দেশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। এখনও করছে। তবে এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাদকতা রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে দু’জন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।

করোনার ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থানে থাকা বাংলাদেশও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে প্রায় সব কিছু খুলে দেয়। কঠিন জীবন বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। খুলে দিতে তাই বাধ্য হয়। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সাামজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় সরকার। কিন্তু প্রথম দিকে নিয়ম কিছুটা মানা হলেও, অচিরেই সব যেন বুড়িগঙ্গার জলে ধুয়ে যায়। যেতে থাকে। বর্তমানে সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। ঢাকায় সেই আগের ছবি ফিরে এসেছে। গায়ে গা লাগা ভিড়, ধাক্কাধাক্কি সবই চোখ পড়ছে এখন। কাজের ভিড় তো আছেই। অকারণ সমাবেশও কম নয়।

মঙ্গলবার সামাজিক দূরত্বের বর্তমান অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে আড়ংয়ের একটি আউটলেটে ঢুঁ মারতে হয়েছিল। গুলশান লিঙ্করোডে অবস্থিত আউটলেটটি যথেষ্ট বড়। অথচ পুরোটা অধিকার করে নিয়েছেন ক্রেতা। ভিড় এত যে, ঈদের কেনাকাটা বলে মনে হচ্ছিল। আসলে মূল্যছাড় চলছে। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেল জরুরী কোন কেনাকাটা নয়, উইন্ডোশপিংয়ে ব্যস্ত সবাই।

সায়মা নূর নামের এক গৃহিণী বেশ উচ্ছ্বাস নিয়েই বললেন, আড়ং তো সাধারণত এত ছাড় দেয় না, এখন দিচ্ছে। তাই চলে আসলাম। জরুরী কিছু না। তবে পরে তো কাজে লাগবে।

দূরত্বকে টাটা বাই বাই বলার দৃশ্যমান উদাহরণ বাস ট্রেন ও বিমান। কিছুদিন আগেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একটি আসন ফাঁকা রাখার নির্দেশনা ছিল। নিদের্শনা অনুসরণ করা হচ্ছিল বাসে ট্রেনে বিমানে। বর্তমানে সরকারী সিদ্ধান্তেই আগের মতো যাত্রী পরিহন করা হচ্ছে।

করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর গত ১ জুন থেকে বাসে এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। ৬০ ভাগ বেশি ভাড়া গুনে যাতায়াত করছিলেন যাত্রীরা। তবে চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে সব আসনেই যাত্রী। পাশাপাশি বসছেন তারা।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বেবিচক গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখে। অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর চীন ছাড়া সব দেশের সঙ্গে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এভাবে নানা পথ ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পর ১৬ জুন থেকে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে লন্ডন এবং কাতার রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য দেশের ফ্লাইটগুলো চালু করা হচ্ছে। বিমানে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে যথারীতি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছিল। কিন্তু গত রবিবার থেকে সামাজিক দূরত্বকে বাই বাই বলেছে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো। এখন আর কোন বিধিনিষেধ নেই। সব আসনেই যাত্রী। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্লেনের শেষ দুটি সারির সিট খালি রাখতে হবে। বাকি সিটের বেলায় এর প্রয়োজন হবে না।

সর্বশেষ মঙ্গলবার থেকে সব আসনে যাত্রী নেয়ার ঘোষণা আসে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে। আজ বুধবার থেকে শতভাগ টিকেট বিক্রি হবে। এর আগে গত মার্চের শেষে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ৩১ মে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে শুরু করে ট্রেন। ৫০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হচ্ছিল তখন। আজ থেকে শতভাগ।

তার মানে, সামজিক দূরত্ব আর থাকছে না। অনেকে বলেছিলেন, কোভিড প্রভাব ফেলবে ভবিষ্যতের জীবনাচারে। সে লক্ষণ আছে কোথাও? নেই। বরং করোনাকালের প্রধান আলোচনা সামাজিক দূরত্ব বাংলাদেশে এসে মাঠে মারা গেল। বাকি যা কিছু অর্জন, থাকবে তো? শেষ রক্ষা হবে তো বাঙালীর? কেবল সময় জানে এ উত্তর। সেদিকেই না হয় তাকিয়ে থাকা যাক।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com