ইউএনও’র ওপর হামলার মূল আসামি আসাদুল না রবিউল?
ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলাকারী মূল আসামি কে- আসাদুল না রবিউল? এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ইউএনও’র ওপর হামলায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া ইউএনও’র বাসার মালি রবিউল ইসলাম ফরাস। দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানিয়েছেন, রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এই হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি এবং মই স্বীকারোক্তি মতো উদ্ধারও করা হয়েছে। এদিকে, এই মামলায় শনিবার বিকালে রবিউল ইসলাম ফরাসকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেনের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র ওসি ইমাম আবু জাফর। পর্যালোচনা শেষে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
অন্যদিকে, ইউএনও’র উপর হামলা মামলার প্রধান আসামি যুবলীগের বহিষ্কৃৃত নেতা আসাদুল হককে ৭ দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় প্রথম গ্রেপ্তারকৃত আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতো র্যাব-১৩ ঘটনার দু’দিন পর ৪ঠা সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদের সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিং এ জানায়, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনা চুরির ঘটনা থেকে। চুরি করতে বাধা দেয়ায় চোর আসাদুল হক ও তার অপর দুজন সঙ্গী নবীরুল ইসলাম এবং সান্টু কুমার এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সেই সময় আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতো, ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজে পরিহিত আগন্ত্তুকের লাল রঙের টিশার্ট উদ্ধার করা হয়েছে, আসাদুলের বাড়ি থেকে। এমনি তথ্য জানায় র্যাব। শুধু তাই নয়, আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতোই রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম এবং সান্টু কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের ৩ জনকে আদালতের মাধ্যমে ৭ দিন করে প্রত্যেককে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কিন্তু, মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ে পুলিশ। ফলে ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে কমপক্ষে কুড়িজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে অধিকাংশকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে, সিসিটিভি ফুটেজ এবং চলনের গতি এবং চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে সন্দেহের জালে পড়ে রবিউল ইসলাম ফরাস। ফরাসের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলা বিজোড়া ইউনিয়নের বিকোড়া গ্রামে। তার বাবার নাম খতিব উদ্দিন। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হওয়া রবিউল ইসলাম ফরাস ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ তার স্বীকারোক্তি মতো একটি পুকুর থেকে হামলার অস্ত্র হাতুড়ি এবং ব্যবহৃত মই উদ্ধার করেছে। পুলিশের আইজিপি’র পরামর্শে পুলিশ এই মামলাটির অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, রবিউলের স্বীকারোক্তি মতে, এই ঘটনাটি সে ঘটিয়েছে। তার কথা মতো হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও মইও উদ্ধার হয়েছে। তাই, আসামি রবিউলকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যেহেতু, এই মামলার বাদী ইউএনও’র ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন নির্দিষ্ট আসামির নাম উল্লেখ করেননি। এ কারণে মামলার প্রধান আসামি পরিবর্তন হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে। রবিউল ইসলামকে আদালতে রিমান্ড চেয়ে হাজির করার সময় একটি নির্দেশিকা আবেদন দিয়েছে। সেখানে প্রধান আসামি হিসাবে এখন স্বীকারোক্তি মতো ররিউল ইসলাম ফরাসই হচ্ছে।
তাই রবিউল ইসলাম ফরাসকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণের আগে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। প্রেস ব্রিফিং এ রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ছাড়াও দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম এবং পিপিএম ( বার), ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যা প্রচেষ্টা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম আবু জাফর সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ৫০ হাজার টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে ৪ মাস আগে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে রাখা হয়।
সিসিটিভির ফুটেজ এবং সাময়িক বরখাস্ত ঘটনার বিবেচনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দিতে ঘটনার সবকিছু জানায়।
জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রবিউল ইসলাম ফরাস ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে ২০১৯ সালের শেষে অস্থায়ী মালি হিসেবে নিয়োগ পায়। ৪ মাস আগে মালি রবিউল ইসলাম ফরাস ইউএনও ওয়াহিদার বাসা থেকে একটি লাগেজ ইউএনও কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার সময় সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা খোয়া যায়। ঘটনাটি ইউএনও ওয়াহিদা জেলা প্রশাসককে জানালে জেলা প্রশাসক মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
অন্যদিকে, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার প্রত্যাহারকৃত ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলামকে পুলিশ লাইনসে রাখা হয়েছে। তার স্থলে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, রংপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর মো.আজিম উদ্দিনকে।