প্রধানমন্ত্রী, কাদের সিদ্দিকীদের ফিরিয়ে নিন

0

ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি তার লন্ডনের বাসভবনে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের স্মৃতিময় ইতিহাস বলতে গিয়ে অনেকের গল্পই তুলে এনেছিলেন। এর মধ্যে একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বেসামরিক বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর যোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী বাঘা সিদ্দিকী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। একজন বেপরোয়া অসীম সাহসী বীর যোদ্ধা ও সংগঠক হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলে ভারতসহ বাইরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন লম্বা, হালকা-পাতলা অকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। যিনি একাই তার নেতৃত্বে ১০ হাজারের শক্তিশালী গেরিলা যোদ্ধার দল তৈরি করেছিলেন। যেটি কাদেরিয়া বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। তার বীরত্বের মধ্য দিয়ে তিনি ভারতীয় বাহিনীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন ও যুদ্ধে যৌথ সহযোগিতায় সম্মত হন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে তার পরিচালিত দুর্ধর্ষ গেরিলা যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটা গৌরবময় দিক।

পাকিস্তান যখন পরাজয়ের মুখে, মিত্রবাহিনী যখন ঢাকায় প্রবেশের মুখে, তখন পূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার ভয়ঙ্কর ভুল করে প্রায় আত্মঘাতী একটা পথ বেছে নিয়ে সরাসরি পাকিস্তানিদের পাতা ফাঁদের ভিতরে পড়তে যাচ্ছিলেন, সেই পথে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অ্যান্টি পার্সোনেল ও অ্যান্টি ট্যাংক, ল্যান্ড মাইন বিছিয়ে রেখেছিল। লাইনের পেছন থেকে বাঘা সিদ্দিকী এই আসন্ন বিপদের খবর জানতে পেরে দুর্দান্ত গতিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং তার বাহিনী ও ভারতীয় সেনাদের যৌথ পদযাত্রা নিরাপদ রাস্তায় সরিয়ে নেন। সেদিন বাঘা সিদ্দিকীর সময়মতো হস্তক্ষেপের ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়। সঠিক সময়ে কাদের সিদ্দিকীর সঠিক সিদ্ধান্ত ও সাহসিকতার জন্য ভারত তাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। কাদের সিদ্দিকী ও তার বাহিনীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র জমাদানের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কয়েকদিন পরই মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনীর পল্টনে অস্ত্র জমাদানের নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর আহ্বানে ব্যাপক সাড়া দেন। মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের যোদ্ধারা হাজার হাজার টন আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড তাঁর পায়ের কাছে এনে রাখেন। আমরা সেদিনের সামরিক কায়দায় পোশাক পরিহিত লম্বা চুল, মুখভর্তি দাড়ি ও মাথায় টুপি শোভিত এই বীর যোদ্ধাকে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তুলনা করলেও শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বিশ্বনন্দিত বিপ্লবী চে গুয়েভারার সঙ্গে তার অবয়ব তুলে ধরলেন। তিনি বললেন, চে গুয়েভারার মতো লম্বা চুল বাতাসে উড়িয়ে একটা সাদা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে নাটকীয়ভাবে কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর সামনে আসেন। ঘোড়া থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান। তারপর পা ছুঁয়ে অস্ত্র সমর্পণ করেন। যেটি তার নেতার প্রতি অনুগত আচরণ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল।মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামী মানুষের কাছে কিংবদন্তিই হয়ে ওঠেননি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সম্পদে পরিণত হয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তাদের গোটা পরিবার বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও আদর্শের প্রতি নিজেদের উৎসর্গ করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দীর্ঘ পথ হেঁটেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর এই স্বাধীন মাতৃভূমির বীর যোদ্ধাকে একটু বেশি স্নেহ-মমতা দিয়েছিলেন। বাঘা সিদ্দিকীখ্যাত কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমও জাতির পিতাকে পিতার আসনে বসিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে সংসদ সদস্য ও বাকশাল ব্যবস্থায় টাঙ্গাইলের জেলা গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যৌবনে বঙ্গবন্ধুর প্রেমে পড়ে আওয়ামী লীগ ও মাতৃভূমির ভালোবাসার ঋণে বাঁধা পড়েছিলেন এই সাহসী বীর। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় হত্যাকা- সংঘটিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঠিকানা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ একদল বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীলনকশায় নৃশংসভাবে হত্যা করে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com