এই আসাদুলই মধ্যরাতে রুমে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলে পড়ে
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার ওপর সরকারি বাসায় ঢুকে হামলার ঘটনায় প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) একটি যৌথ দল।
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে হাকিমপুর উপজেলাস্থ হিলির কালিগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতের নাম আসাদুল ইসলাম (৩৫)। গ্রামের বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকায়।
শুক্রবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াহিদ ফেরদৌস।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র্যাবের রংপুরের একটি দল যৌথভাবে শুক্রবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে কালিগঞ্জ এলাকা থেকে আসাদুলকে গ্রেফতার করে।
ওসি জানান, হামলার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি এই আসাদুলই ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে হাতুড়ি দিয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় আঘাত করেছিল। গ্রেফতারের পর তাকে রংপুরে র্যাব কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউএনও ওয়াহিদার বড়ভাই ফরিদ হোসেন বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ২ জনকে গতকাল বৃহস্পতিবার আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আটককৃত দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না।’
গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে ঘোড়াঘাটে সরকারি বাসভবনে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী শেখকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করে ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পরই গুরুতর আহত ইউএনও ওয়াহিদাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
তবে ইউএনও’র অবস্থা দ্রুত অবনতি হলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। ওয়াহিদা খানম এখন রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একই হাসপাতালে তার বাবারও চিকিৎসা চলছে।
বুধবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনওর সরকারি বাসায় ঢুকে এবং ভেন্টিলেটর ভেঙে ইউএনওর রুমে প্রবেশ করে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত শুরু করে। একসময় ইউএনও’র চিৎকার শুনে তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা পাশের রুম থেকে ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাকেও কুপিয়ে জখম করে। পরে পাশের কোয়ার্টারের বাসিন্দারা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওই রাতেই প্রথমে ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরদিন সকালে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার বাবা-মেয়েকে ঢাকায় আনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁ থেকে মাঝেমধ্যেই মেয়ের বাসায় বেড়াতে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী শেখ। ওয়াহিদার স্বামী রংপুরের পীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।