৪০০ পরিবারের ত্রাণের টাকায় সমান ভাগ বসালেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির করোনা সহায়তার টাকা অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংগঠনটির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে। বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব বলছেন, তদন্ত করে প্রমাণ মিললে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা তার দুই সহযোগী সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ছাইদুর রহমান ও সাবেক মহিলা মেম্বার আছিয়া বেগমের মাধ্যমে তিন হাজার টাকার মধ্যে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা জোরপূর্বক হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানা যায়, করোনাকালে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের পাশাপাশি সহায়তা দেয় আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। গাইবান্ধার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ৪০০ পরিবারকে তিন হাজার করে টাকা দেয় সংগঠনটি। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে তালিকা করার পর মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হয়। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা করে উপকারভোগীদের মোবাইলে দেয়া হয়। ফরম পূরণের মাধ্যমে গত ২৬ জুলাই সাঘাটা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাদের হাতে সহায়তার নগদ টাকা তুলে দেয়া হয়।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের লোক এসে এক হাজার টাকা নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন ঘুড়িদহ গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম
টাকা হাতে পেয়ে উপকারভোগীরা অনেক খুশি হলেও পরদিন সকালে ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ছাইদুর রহমান ও সাবেক মহিলা মেম্বার আছিয়া বেগম তাদের বাড়ি এসে হাজির হন টাকার ভাগ নেয়ার জন্য। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান টাকা নেয়ার জন্য তাদের পাঠিয়েছেন বলে জানান তারা। এ সময় তারা উপকারভোগীদের কাছে দুই হাজার টাকা করে নিয়ে যান।
সাঘাটার দক্ষিণ ঘুড়িদহ গ্রামের ছলিম উদ্দিন বলেন, সহায়তার তালিকায় নাম দেয়ার আগে সাবেক মেম্বার ছাইদুর রহমান ও সাবেক মহিলা মেম্বার আছিয়া বেগম বাড়িতে এসে বলেন টাকার ভাগ দিলে নাম দেব। যারা টাকার ভাগ দেবে তাদের নাম তালিকায় উঠবে। টাকা পাওয়ার পর ভাগের টাকা না দিলে চেয়ারম্যান আর কোনো সহায়তা দেবেন না। সে কথা অনুযায়ী টাকার ভাগ নিয়ে গেছেন তারা।
একই গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, সহায়তার তিন হাজার টাকা হাতে পেয়েছিলাম। টাকা নেয়ার পরদিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের লোক এসে দেড় হাজার টাকা দাবি করেন। আমি দিতে অস্বীকার করলে জোর করে এক হাজার টাকা নিয়ে যান। আমরা গরিব মানুষ, টাকা না দিলে গ্রামে থাকতে দেবে না। টাকা দিয়েছি তাদের।
উপকারভোগী সবার একই ভাষ্য, ‘সাবেক দুই মেম্বার ছাইদুর ও আছিয়া বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের কথা বলে টাকা নিয়েছেন
একই ইউনিয়নের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী বিলকিছ বেগম বলেন, তালিকা করার সময়ই মেম্বার ছাইদুর রহমান বলেছিলেন একটা শর্তে নাম দেব। তিন হাজার টাকার মধ্যে দুই হাজার টাকা আমাকে দিতে হবে। আমি প্রথমে ৫০০ টাকা দিয়েছি, কিন্তু তিনি মানেননি। পরে এক হাজার টাকা দিয়েছি।
উপকারভোগী সবার একই ভাষ্য, ‘সাবেক দুই মেম্বার ছাইদুর ও আছিয়া বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের কথা বলে টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামছাড়া করা হবে বলেও হুমকি দেন তারা।
ঘুড়িদহ ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান আতার বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নে। তিনি ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৫ বছর। সেই সময় ছাইদুর রহমান ও আছিয়া বেগম ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন। সেই সূত্রে তাদের মধ্যে সম্পর্ক। এই দুই সাবেক মেম্বারের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিভিন্ন অপকর্ম করেন; যেন কেউ তার দোষ দিতে না পারে।
এদিকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি মেম্বার ছাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। অভিযুক্ত সাবেক নারী ইউপি মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযুক্ত গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান আতা বলেন, এ বিষয়ে মোবাইলে কথা বলতে আমি রাজি নই। সাক্ষাতে কথা হবে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমন কাজ করতে পারেন না।
গাইবান্ধা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইউনিট লেভেল অফিসার মো. পাভেল রহমান বলেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির করোনার সহায়তার তালিকা আমরা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করি। টাকা বিতরণের পর কোনো দালাল চক্র এই টাকা হাতিয়ে নেবে- এটা মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন জানান, তদন্তপূর্বক এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।