১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন সাকিব!
কয়েকদিন ধরেই দেশের ক্রিকেটপাড়ার প্রায় সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, সাকিব আল হাসান কি যাচ্ছেন ভারত সফরে? নাকি গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তির দায়ে তাকে ছেড়েই দল চলে যাচ্ছে? এর সঙ্গে সাকিবের অনুশীলনে যোগ না দেওয়া ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্য সেই প্রশ্নের সঙ্গে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। সোমবার রাত পর্যন্ত সাকিবের ভারত সফর নিয়ে চলছিল নানা আলোচনা। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও সাকিব আল হাসান আদৌ ভারত সফরে যাচ্ছেন কি না, সে বিষয়ে মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান।
তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করে। কানাঘুষা শুরু হয় সাকিবের সেই ভারত সফর নিয়েই। তবে সাকিব যাচ্ছেন কিনা সেই প্রশ্ন থেকে সরে নতুন করে প্রশ্ন উঠে সাকিব আদৌ যেতে পারবেন কি না! রাতের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভক্ত ও সমর্থকদের মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম হল একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতার প্রধান খবরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি দমন সংস্থা অ্যান্টিকরাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটের (আকসু) রায়ে ১৮ মাসের জন্য সব ফরম্যাট থেকে নিষিদ্ধ হতে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টি-২০ ও টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানো কিংবা অনৈতিক আর্থিক সুবিধা গ্রহণের কোনো অভিযোগ নেই। বরং ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়ে তা গ্রহণ না করলেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বোর্ড বা আইসিসিকে কিছুই জানাননি তিনি।
সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিসিবির বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম। বিসিবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না আসলেও নতুন মোড় নেয় তার ভারত সফর। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সাকিবের ব্যাপারে ইতোমধ্যে বিসিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে আইসিসি। তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন না করার নির্দেশনাও দিয়েছে আইসিসি। এ কারণে অসুস্থ বলে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন না সাকিব।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিসিবির একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকিব পরবর্তী সময়ে আকসুকে সহায়তা করায় তার প্রতি কিছুটা নমনীয় তারা। আকসুর জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করায় ১৮ মাস শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আপাতত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আইসিসি। তবে সাকিব আপিল করলে সেটা কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিসিবির সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি সাকিব আইসিসির কাছেও ক্ষমা চেয়ে শাস্তি মওকুফের আবদেন করবেন। আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগের নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চললে এই শাস্তি ছয় মাসে নেমে আসতে পারে। এটাই এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি।
আইসিসির নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হবে। না হয় আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থা আকসুকে অবহিত করতে হবে। কোনো ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিসিয়াল, টিম অফিসিয়ালসহ সরাসরি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি জুয়াড়িদের কাছ থেকে পাওয়া অনৈতিক প্রস্তাব না জানালে, লুকানোর চেষ্টা করলে কিংবা আকসুর জিজ্ঞাসাবাদেও অস্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে ‘আইসিসি অ্যান্টিকরাপশন’ ধারা ২.৪.২, ২.৪.৩, ২.৪.৪, ২.৪.৫ ও ২.৪.৬ কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ছয় মাস আর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে আইসিসি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজই বিসিবির সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার হবে সাকিবের ভারত সফরে যাওয়া না-যাওয়ার ব্যাপার। একই সঙ্গে বিস্তারিত জানা যাবে তার বিরুদ্ধে আইসিসির অবস্থান আর শাস্তির ব্যাপারে।