অধিকার আদায়ের জন্য জনগণকে জেগে উঠার আহ্বান বিএনপির
বাংলাদেশে ‘গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স- এটা একটা মানবতা বিরুদ্ধে অপরাধ। দিস এ ক্রাইম এগ্রেনেস্ট হিউমিনেটি জাতিসংঘের চার্টারে সেটা আছে। অথচ সেটা এখানে (বাংলাদেশ) অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন দেখি যে, সেনা প্রধান আর আইজি প্রধান দু‘জনে পাশাপাশি বসে প্রেস কনফারেন্স করেন, মেজর সিনহার গুলির পরে- এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কার কাছে যাবো? কোথায় যাবো? কি বলব?’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির গুম-বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার নেতা-কর্মীদের ৪০টি পরিবারকে সহযোগিতা প্রদানে এই অনুষ্ঠান হয়।
করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে অনুষ্ঠানে গুম ও খুন হওয়া ঢাকা মহানগরের এসএম আদনান চৌধুরী, কাওসার হোসেন, ডা. সগীর, নজরুল ইসলাম, মো. মজিদ, ঢাকা জেলার ফয়সল উদ্দিন হাশেমী ও মানিকগঞ্জের মো. শাওন-এই সাত পরিবারের সদস্যের হাতে আর্থিক সহযোগিতার টাকা তুলে দেন মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জনগণকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে তাই আমাদের মানুষের কাছেই যেতে হবে, তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এখন যে লড়াই, এই লড়াই, এই সংগ্রাম হচ্ছে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবার লড়াই, এ্ই সংগ্রাম হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার লড়াই, এই সংগ্রাম ও লড়াই হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বকে রক্ষা করবার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের হতাশ হলে চলবে না, এই লড়াইয়ে আমাদের পরাজিত হলে চলবে না। এই লড়াইয়ে আমাদেরকে জয়লাভ করতেই হবে।’
গুম হওয়ার পরিবারের আর্তনাদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আর কতকাল, কতদিন আমরা এভাবে চোখের অশ্রু ফেলব? আজকে যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে, অধিকারের জন্য লড়াই করে তাদেরকে নির্মম-নির্যাতন-অত্যাচারের শিকার হতে হয়। তারা আর্তনাদ করছেন তাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে পাওয়ার জন্যে।’
ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়া, খুন হওয়া মানুষের আর্তনাদ তাদের (সরকার) কানে পৌঁছায় না। তাদের কানে পৌঁছায় না এই জন্যে যে, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে তাদের এতটুকু দ্বিধা হয় না, নিরীহ সন্তানদের পিতৃহারা করতে তাদের এতোটুকু সংকোচ হয় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অবলীয়লায় তারা মিথ্যা কথা বলে, অবলীলায় মানুষের সামনে বিভ্রান্ত করে। আমরা যখন নিখোঁজ বা গুম হওয়ার কথা মানুষের সামনে বার বার করে তুলে ধরি তারা বলেন- ‘না আমরা তো এটা বলতে পারি না। অনেকে চলে যায়, নিজেরা নিজেরা চলে যায়। তারা নাকী হারিয়ে গেছে…, অনেকে বলে এই ধরনের কোনো ঘটনাই নাকী ঘটে নাই।’
সাবেক সাংসদ এম ই্লিয়াস আলী, পারভেজ আলম হিরু, চৌধুরী আলমমহ অসংখ্য নেতা-কর্মী গুম হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনাদের (গুম হওয়া পরিবার) এই ত্যাগ গোটা জাতিকে নিসন্দেহে শক্তি যোগাবে জেগে উঠতে, নিসন্দেহে এরা পরাজিত করবে সেই সমস্ত ভয়ংকর দুবৃর্ত্ত, ভয়ংকর দানবদের যারা জোর করে আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে।’
তিনি ফখরুল বলেন, ‘নিসন্দেহে এই লড়াইয়ে আমরা জয়ী হবো। আমরা এটা বিশ্বাস করি। তা নাহলে মানব জাতির ইতিহাস ভুল হয়ে যাবে। জোর করে কেউ টিকতে পারে নাই, নমরুদ পারে নাই, ফেরাউন পায় নাই, হিটলার পারে নাই। সুতরাং জোর করে কেউ টিকতে পারবে না।’
অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্মৃতির প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ২০১৪ সালে গুম হওয়া এসএম আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী ও কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার, ২০০৯ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সাজেদা বেগম, প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, এসএম জিলানি, ফখরুল ইসলাম রবিন, গাজী রেজওয়ানুল হোসেন রিয়াজ, নজরুল ইসলাম, রফিক হাওলাদার, হারুনুর রশীদ, আজিজুর রহমান মোসাব্বির, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের রিয়াজউদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।