করোনায় ক্লান্তি: শক্তি পেতে যা খাবেন
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম প্রধান উপসর্গ হলো, ক্লান্তি। তাই মহামারির এ সময়ে ক্লান্তির অনুভূতিকে মোটেই অবহেলা করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) গবেষণা মতে, ৬৯ শতাংশ করোনা রোগী ক্লান্তি অনুভব করেন। অনেকে ক্লান্তি লাগলে কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এসব খাবার শরীরে সাময়িক শক্তি যোগালেও স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত চিনি খেলে শরীরে প্রদাহ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত প্রদাহে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ক্লান্তি দূর করতে গিয়ে ক্ষতিকারক খাবার খাচ্ছেন কিনা খেয়াল রাখতে হবে। এমন অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার রয়েছে যা ক্লান্তিও কমাবে, শরীরকেও পুষ্ট করবে। এখানে ক্লান্তি কমাতে পারে এমন কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা দেয়া হলো।
ওটমিল: এটা হলো জটিল কার্বোহাইড্রেট। এতে প্রচুর আঁশ ও পুষ্টি রয়েছে। ওটমিল ধীরে ধীরে হজম হয় বলে অনেকক্ষণ ধরে শক্তি পাবেন। সকালে এক বাটি ওটমিল খেলে দুপুর পর্যন্ত সতেজ থাকতে পারবেন।
ডিম: একটি ডিমে ৭০ ক্যালরি ও ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটি শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে। ডিমে প্রতি ক্যালরিতে অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি পুষ্টি রয়েছে। ডিম ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে বলে অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে যায়, ফলে রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মুরগির মাংস: চামড়া ফেলে দিলে মুরগির মাংস হচ্ছে চর্বিহীন প্রোটিনের ভালো উৎস। মুরগির মাংসও ধীরে ধীরে শক্তি যুগিয়ে থাকে। অন্যান্য মাংসের চেয়ে মুরগির মাংসে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কম।
গরুর কলিজা: পর্যাপ্ত ভিটামিন বি১২ ছাড়া ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। এই পুষ্টির একটি সর্বোত্তম উৎস হলো গরুর কলিজা। এতে প্রচুর প্রোটিনও থাকে, যা দীর্ঘসময় ধরে শক্তি যোগাতে থাকে। কলিজা না পেলে গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মাছ, দুধ ও ডিমও খেতে পারেন। এগুলোতেও ভিটামিন বি১২ পাবেন।
শিমের বিচি: শিমের বিচি ও অন্যান্য বিনস হলো মাংস অনাহারী মানুষদের জন্য প্রোটিনের চমৎকার উৎস। বিনসে প্রচুর আঁশও থাকে, যা ধীরে হজম হতে সাহায্য করে। এসব খাবারে প্রচুর ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে, যা শরীরের কোষগুলোকে শক্তি তৈরিতে সহায়তা করে।
ইলিশ মাছ: ইলিশ মাছ ও এর মতো দেখতে সার্ডিন মাছে উচ্চ মাত্রায় উচ্চমানের প্রাণীজ প্রোটিন রয়েছে, যা ধীরে শক্তি যুগিয়ে ক্লান্তি নিবৃত্ত করে। এসব মাছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে অবদান রাখে।
কফি: ক্লান্তিতে ভুগলে সকালে কফি পান করতে পারেন। এটি ক্লান্তির ওপর কিছু না কিছু প্রভাব ফেলবে। কিন্তু অতিরিক্ত পান করবেন না, কারণ ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যেকোনো সংক্রমণে গভীর ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বেরি: ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও স্ট্রবেরি- যেটাই খান না কেন, ক্লান্তির অনুভূতি কিছুটা কমবে। বেরিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অন্যান্য পুষ্টি শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দিতে কাজ করে। কালো জামও খেতে পারেন- এর পুষ্টিগুণও বেরির চেয়ে কম নয়। মনে রাখবেন, ব্ল্যাকবেরি ও কালো জাম এক নয়।
ডার্ক চকলেট: যারা ক্যান্ডি খেতে ভালোবাসেন তাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে তুলনামূলক একটি ভালো উপায় হচ্ছে ডার্ক চকলেট। ক্যান্ডি বার ও মিল্ক চকলেটের চেয়ে ডার্ক চকলেটে চিনি কম থাকে। এই চকলেটের কোকোয়াতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কোষের সুরক্ষায় সহায়তা করে, রক্তচাপ কমায় ও রক্ত চলাচল বাড়ায়।
পানি: শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে ক্লান্তির অনুভূতি আসে। পানি শরীরের কোষগুলোতে জ্বালানি ও পুষ্টি পৌঁছে দেয় এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। যারা প্রচুর পানি পান করেন তারা সাধারণত চর্বি, চিনি, লবণ, কোলেস্টেরল ও ক্যালরি কম খেয়ে থাকেন। এর ফলে পুষ্টি শরীরকে সতেজ রাখতে বেশি সুযোগ পায়।