রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের বিরোধিতা মাহবুব তালুকদারের
রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইনের’২০২০ বিরোধিতা করে কমিশন সভায় মঙ্গলবার আবারো নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্ন মত) দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ এর চ্যাপ্টার সিক্স ‘এ’-এর বিভিন্ন আটিকেল কর্তন করে রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ প্রনয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
আমি এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রনয়ন হঠকারী সিদ্ধান্ত। আমি পূর্বেও বলেছি, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল। যা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব গৃহীত হলে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর অঙ্গহানি ঘটবে। যাতে একে বিকলাঙ্গ মনে হবে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাসহ সব কমিশনারকে নোট অব ডিসেন্ট দেন তিনি। দুদিনের ব্যবধানে আবারও নোট অব ডিসেন্ট প্রদান। এর আগে ২৪ আগস্ট কমিশন সভায় প্রস্তাবিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী (আরপিও) এবং স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা আইনেরও বিরোধিতা করেন এই জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার। বৈঠকে নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার পর নিজের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান মাহবুব তালুকদার।
তিনি নোট অব ডিসেন্টে আরো লিখেছেন, প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’ এর প্রারম্ভিক অংশে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন ইত্যাদি পরিবর্তন বিষয়ে আমি একমত নই। এতে সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নতুন যে পদ-পদবি প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আমার কাছে অনাবশ্যক মনে হয়। রাজনৈতিক দলসমূহ ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত যে ৫০টি মতামত পাওয়া গেছে, তাতে এসব পদ-পদবি পরিবর্তনের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কী কারণে বা কোনো যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ‘আরপিও, ৭২’ এর সংশোধন করা যেতে পারে, যা পূর্বেও করা হয়েছে। আমি মনে করি, আইনের পরিবর্তন আইন কমিশনের কাছে ন্যস্ত থাকাই সমীচীন।
তিনি বলেন, উল্লেখ্য যে, আজকের (বুধবারের) সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ৬৩তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এই আইন সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনায় নির্বাচন কমিশনে নানরূপ মতদ্বৈধতা ছিল। আইনটি মতামত যাচাইয়ের পূর্বে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ দুইটি রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য দলও এই আইন প্রনয়নের বিরোধিতা করেছে। বর্ণিত অবস্থায়, ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে আমি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি।