রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সব পক্ষকে জোর তৎপরতার আহ্বান বিএনপির
নৃশংস নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে জোরালোভাবে তৎপরতা চালানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর স্বাক্ষরে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার তিন বছর আজ পূরণ হলেও তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে। মিয়ানমারের এই জনগোষ্ঠী সেই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়ে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, অত্যাচারের বিভীষিকায় প্রাণহানিসহ সহায়-সম্বল হারিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ শুরু হয়েছে। মানবভোগান্তির এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পড়ছে ভয়াবহ চাপ। প্রথম দিকে বাংলাদেশের জনগণকেই সম্পূর্ণভাবে এই ব্যয় নির্বাহ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার সহযোগিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণের অর্থের একটি বিরাট অংশ তাদের জন্য খরচ হচ্ছে। দেশের পাহাড় ও বন কেটে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থাপন করতে হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজারেরও বেশি আশ্রয় ক্যাম্প। এসব ক্যাম্প তৈরি করতে প্রয়োজন হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। জাতিসংঘ মনে করে, এতে দেশের প্রায় ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এত ক্ষতি মেনে নিয়েও বাংলাদেশের জনগণ রোহিঙ্গাদের পাশে থেকেছে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ, ওষুধ, শিশু খাদ্য, স্যানিটেশন ও টিউবওয়েল বসিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহণে সহযোগিতা করেছে।
‘কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আগ্রহী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদেরকে সঙ্গে নিয়ে জোরালো চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার অগ্রগতি করতে পারতো সরকার। কিন্তু সরকারের তৎপরতা বরাবরই নির্বিকার। ইতোপূর্বে কয়েবার কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর খবর প্রচারিত হলেও এর কোনো বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি। ‘লিপ সার্ভিস’ ছাড়া এ ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারেরই বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সামর্থ থাকে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক অন্ধকার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশার মধ্যে রোহিঙ্গারা হাবুডুবু খাচ্ছে। বেশ কিছু রোহিঙ্গা বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। দেশ থেকে বিতাড়িত ও গৃহহীন রোহিঙ্গাদের ইয়াবা কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে। এই কারবারের সাথে ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার কথাও সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান নিপীড়ন, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করে তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তাসহ অবিলম্বে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলোর সরকার, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাসমূহ, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার গ্রুপ ও এনজিও তথা সকল পক্ষকে নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আমি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
এই সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে আঞ্চলিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে বলে বিভিন্ন দেশ যে মত প্রকাশ করেছে, সেটির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করে ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে ভূমিকা পালনকারী সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে জোরালোভাবে তৎপরতা চালানোর জন্য আহবান জানাচ্ছি।