এবার উখিয়ার ওসির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন নির্যাতিত নারী

0

কক্সবাজারের উখিয়া থানা পুলিশের ওসি মর্জিনা আকতারসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ মহেশখালীর রিয়াদ সোলতানা নুরী (২২) নামের এক তরুণী এ মামলা করেন। মামলাটি পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একরামুল হুদা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- কনস্টেবল মো. সুমন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম ও এএসআই মো. শামীম। মামলার বাদি নুরী মহেশখালী উপজেলার কালারমারছরার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার বাসিন্দা নুরুচ্ছবির মেয়ে। তিনি কক্সবাজারের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কনস্টেবল মো. সুমনের (বর্তমানে রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কর্মরত) সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক রিয়াদ সোলতানা নুরীর। এই সুবাদে বিয়ের কাবিনের কথা বলে ৭ জুলাই দুপুর ২টার দিকে খুনিয়াপালং চেকপোস্ট সংলগ্ন তার কক্ষে নিয়ে যান। কাজি আসার অপেক্ষার অজুহাতে কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। পরে তাকে ধর্ষণ করেন সুমন। এরপর চেকপোস্টের পাশের এক দোকানে বসিয়ে রেখে জরুরি কাজের কথা বলে সুমন পালিয়ে যান। অবশেষে রাত ১১টার দিকে বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে জানান সোলতানা নুরী।

মামলার এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পরামর্শমতো উখিয়া থানায় গেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও মোবাইল কেড়ে নেন ওসি মর্জিনা আকতার। এরপর অভিযুক্ত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমাকে কক্ষে আটকে ব্যাপক মারধর ও নির্যাতন করা হয়। এমনকি পায়ে রশি ও পরনের হিজাব দিয়ে চোখ বেঁধে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে রাখা হয়। মামলার এজাহারের সঙ্গে নির্যাতনের কিছু ছবিও প্রমাণ হিসেবে দিয়েছেন বাদী।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর একরামুল হুদা বলেন, বাদির অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইয়ের কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ৭ জুলাইয়ের ঘটনাটি প্রকাশের পর গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, নুরীকে তার থানায় নির্যাতন করার তথ্যটি সঠিক নয়।

মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর স্টেশনে থেকে দায়িত্বপালন করা যায় কি-না বা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, মামলার কাগজপত্র হাতে পেলে আইনের বিধি মতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

সেই মামলায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকেও যুক্ত করা হয়েছে। তারা সকলে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন। তাদের প্রথমে সাতদিনের রিমান্ড আদেশ এবং পরে আরও চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এটি দেখে বিভিন্ন থানায় পুলিশ কর্তৃক নানাভাবে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে উদ্যোগী হন। সেই ধারাবাহিকতায় নির্যাতিতা তরুণী নুরীও মঙ্গলবার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com