নিজামীর নামফলকে ‘শহীদ’ শব্দ কালি দিয়ে ঢেকে দিলেন ছাত্রলীগ নেতা
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর কবরের নামফলক থেকে ‘শহীদ’ শব্দটি ঢেকে দেয়া হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল খান সানা ‘শহীদ’ শব্দটি কালো কালি দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) সানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রাতে তিনি সাঁথিয়ার ধোপাদহ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহযোগিতায় উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের মনমথপুর গোরস্থানে নিজামীর কবরে স্থাপিত নামফলকে শহীদ শব্দটি মুছে দেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল খান সানা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর অনুসারীরা অনেকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজামীকে শহীদ হিসেবে প্রচার করে আসছে। এতে শহীদ শব্দটির অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ধোপাদহ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজামীর নিজগ্রাম মনমথপুর গোরস্থানে তার নামফলক থেকে শহীদ শব্দটি মুছে দেয়া হয়েছে।
সানা তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন সাঁথিয়া-বেড়ার প্রিয় নেতা সাবেক সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর অঙ্গীকার ছিল সারা বাংলাদেশ হতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ চিরতরে নির্মূল করা। তারই ধারাবাহিকতায় কুখ্যাত রাজাকার নিজামীসহ সকল রাজাকারের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্যদিয়ে সাঁথিয়ার মাটি আওয়ামী লীগের ঘাটিতে পরিণত করেছেন। কিন্তু এখনো রাজাকার নিজামীর কিছু প্রেতাত্মারা তার নামের পাশে শহীদ শব্দটি লাগিয়ে দেশের সকল বীর শহীদদের অসম্মান করতে চেয়েছিল। তাই আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের, সাঁথিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মেনে নিতে না পেরে ধোপাদহ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহযোগিতায় রাজাকারের নামের সাথে যোগ হওয়া নামফলকটি মুছে দিয়ে দেশের সকল শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটু হলেও সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়েছি। আজ আমি গর্ববোধ করি যে, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী।’
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার বলেন, ‘মতিউর রহমান নিজামী দুটি মামলায় (মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া একজন লোক। তিনি দেশের প্রথমসারির একজন স্বাধীনতাবিরোধী। যারা ধর্মযুদ্ধে ও দেশের জন্য প্রাণ দেন তারা শহীদ খেতাব পান। সে হিসেবে নিজামীর নামের পূর্বে শহীদ শব্দটি ব্যবহার করা যায় না।’
তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল লতিফ।
এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. আব্দুল বাসেত বলেন, একজন মৃত মানুষের কবরে গিয়ে তার নামফলক থেকে শব্দ মুছে দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তিনি এ কাজের তীব্র নিন্দা জানান।
উল্লেখ্য, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ এবং ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে পাবনা-১ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১১ মে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।