একুশে আগস্টের ঘটনা ‘এক-এগারোর রি-এরেজমেন্ট: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
বিএনপির নেতৃত্বকে কবর দিতেই ২০০৪ সালের সংঘটিত একুশে আগস্টের ঘটনা ‘এক-এগারোর রি-এরেজমেন্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, ‘‘২১ আগস্টের ঘটনাটা হাসিনাকে মারার বড় চক্রান্ত -এখানেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। যদি থাকে এই চক্রান্ত ছিলো সেদিন জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বের কবর দেয়া। এটা একটা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বিএনপির ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। ওই ঘটনার প্রকৃত দোষীরা এখনো বেঁচে আছে, নিরাপদে বেঁছে আছে এবং ভালো আছে। তারা দেশে আছে, দেশের বাইরেও আছে। সেটা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কারো অজানা থাকার কোনো কারণ নাই। সেটা দেশী-বিদেশী গোয়েন্দারা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে এটা তাদের নখদর্পনের থাকার কথা। যেহেতু্ এটা একটি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ব্যাপার সেই কারণে আসল ঘটনা কখনো আলোর মুখ দেখবে না, আপনারা-আমরা জানবো না।”
শুক্রবার বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নানের স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, ‘‘এই যে রং অ্যাপ্লিকেশন পলিটিক্সে- মিথ্যা দিয়ে সত্যকে চাপা দেয়া, দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে সামগ্রিক রাজনীতিকে দূর্ঘটনায় ফেলা। ২১ আগস্ট এই রকম ঘটনা ১/১১ ‘র কোনো রি-এরেজমেন্ট হতে পারে। এই যে ১/১১ টা আসছে সরকারে।”
‘‘ ১/১১-এ কে ভিকটিম হয়েছে? বিএনপি হইছে, খালেদা জিয়া হইছে। ১/১১-এ লাভবান হয়েছে কে? হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ। তাহলে ডাউট অব দ্যা বেনিফিসারী যদি বলা হয় ১/১১ এর মাধ্যমে বেনিফিট হয়েছে বিএনপির অতি মুখোমুখি প্রতিপক্ষ।”
২১ আগস্টের ঘটনার দিনটি ‘ভালো দিন নয়’ অভিহিত করে ওই সময়ে সেপ্টেম্বরে ভারতীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারের বক্তব্য উল্লেখ গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘‘ এইদিনটি কোনো ভালো দিন আমি বলি না। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই কারো জন্য কাম্য নয়। ২‘শ উপরে আসন নিয়ে তখন বিএনপি ক্ষমতাসীন। একটা স্টেবল গভার্মেন্ট ক্ষমতাসীন সরকার কখনোই চাইবে না সেই সরকারকে আনস্টেবল করতে। ২১ আগস্টের ঘটনাটা রাষ্ট্রকে আনস্টেবল করা, উস্কানি দেয়া, সুরসুরি দেয়া অর্থাত সরকারকে বিব্রত করা দেশে-বিদেশে সকল ক্ষেত্রে।”
‘‘ এটা যদি প্রতিষ্ঠিত হতো, এটা যদি জনগণ বিশ্বাস করতে পারতো যে, এটা সরকার করেছে অথবা খালেদা জিয়া করেছে বা তারেক রহমান করেছে। তাহলে সেদিন সরকার থাকার কথা না। যখন একটা পাতা নড়ে নাই, একটা আওয়াজ হয় নাই। বিশ্ব শক্তি বুঝতে যে, পিপলস হেজ দেট এক্সসেপটেড দিস ওকারেন্স। অর্থাত এটা জনগণের মাঝে বুঝা হয়ে গেছে যে, এই অপকর্ম সরকার করতে পারে না, একটা গণতান্ত্রিক সরকার করতে পারে না, এটা একটা রেন্সপনসেবল গভার্মেন্ট কোনো মতেই করতে পারে না- এটাই আমি ভারতীয় টেলিভিশনে সেদিন বলছিলাম।”
‘‘ তবে এটাও ঠিক, এই গ্রেনেড হামলায় যারা সম্পৃক্ত তারা ভিকটিম হয় নাই, আসামী হয় নাই। এখানে আমাদেরও ব্যর্থতা আছে। আর সরকার সেই পারপাসটা ভালো করে আমাদের উপরে চাপিয়ে দিতে পারছে। অর্থাত শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে যদি চিন্তা করতো, চেষ্টা করতো- উনি খুব ভালো করে জানেন, যেই ঘটনাটা কেনো ঘটছিলো এবং কারা ঘটাইছিলো। এতোদিনে উনার অজানা থাকার কথা নয়।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ ‘এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে/ আরো জোরে’ এসব আপনাদের শ্লোগানে মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শগত কী তথ্য জনগণের কাছে আপনারা দেন। আপনাদের স্লোগানে তো জনগণের ভাষা নাই। কেন নাই? যেদিন কোরাজান একিনো পাস করলেন ফিলিপাইনের নির্বাচনে সেদিন ম্যাডাম বগুড়াতে। রাত্রি একটায় ফলাফল প্রকাশ হলো।”
‘‘ পরেরদিন আমরা বগড়ুা থেকে জয়পুরহাট যাই। পেছনে আমরা দুইটি গাড়ির মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। আমি যুব দলের সেক্রেটারি হিসেবে আরো অনেকের সাথে আমরা আওয়াজ তুললাম-‘বাংলাদেশের কোরাজান, খালেদা জিয়া লও সালাম’ । তার মানে কি এটা একটা ম্যাসেজ জনগণের কাছে। আমরা কিন্তু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে জনগণের ভাষাগুলো ফুটিয়ে তুলেছি। আজকে কী আছে সেটা। আমাদের মধ্যে সেটা নাই।”
‘‘সেই প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার জন্য রাজণৈতিক আদর্শ যদি লালন না করতে পারেন তাহলে আপনার মধ্যে প্রতিশ্রুতি আসবে না, লক্ষ্য অর্জনের চিন্তাটা যদি আপনি তীব্র করতে না পারেন তাহলে আপনার মনের মধ্যে সাহসও আসবে না। লক্ষ্য অর্জনের আকাংখাকে আপনি নিরঙ্কুশ করতে হলে আদর্শিক ভিত্তির মধ্যে আসতে হবে। স্লোগান হবে দলের জন্য, দেশের জন্য …।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে সদ্য প্রয়াত সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের স্মরণে এই আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল হয়। আলোচনা সভা শেষে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন উলামা দলের আহবায়ক শাহ নেসারুল হক।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান তমিজউদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত নেতার একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টা মেজনাজ মান্নান বক্তব্য রাখেন।