দেশ রক্ষায় প্রয়োজনে করোনার মধ্যেই রাজপথে নামতে হবে: বিএনপি

0

দেশ রক্ষায় প্রয়োজনে করোনার মধ্যেই রাজপথে নামতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের আবরণে ক্ষমতায় আছে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার। এটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য। এই সরকারের যত দ্রুত অবসান ঘটবে ততো সবার জন্য মঙ্গল।

গতকাল বুধবার জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেখুন দেশের মানুষের অধিকারগুলো কীভাবে হরণ করা হয়েছে। মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যাকাণ্ডে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এভাবে অনেক সিনহাকে মেরে ফেলা হয়েছে, কিন্তু সেভাবে জানতে পারেনি জনগণ। আজ মিডিয়ার কারণে জনগণ এখন কথা বলতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র হরণ ও মানুষ অধিকার কেড়ে নিতে ১/১১ সরকারের সময় থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই সময় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যে বিভক্তির সৃষ্টি করা হয়েছে, বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হয়েছে এখনো আবার তাই শুরু হয়েছে।

এখন বিএনপির সামনে যে কাজ তা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, মানুষের অধিকার ফিরে পাওয়া। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্ত করা এবং দেশে একটি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারের দুর্নীতি আজ নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আজকে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, করোনা পরীক্ষা নিয়ে কেলেকাংরি বিদেশে ভাবমূর্তি বলতে কিছু নেই। আমাদের নেতাকর্মীদের সামনে বিশাল দায়িত্ব।

দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, সমাজে যে পচন ধরেছে সেখান থেকে উদ্ধার করা। সব মিলিয়ে দেশকে রক্ষা করা-এ দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের ও আমাদের দলের নেতাকর্মীদের।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজ বাংলাদেশে দুইটা ভাইরাস। একটা হচ্ছে আওয়ামী ভাইরাস। এই ভাইরাসে গত ১১ বছর দ্বারা আমরা আক্রান্ত, আমাদের জর্জড়িত করেছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীরা নামে মামলা দেয়া আছে। মামলার সংখ্যা ১ লক্ষের উপরে চলে গেছে। এই সরকার কত না চেষ্টা করেছে বিএনপিকে নিঃশেষ-নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। আমার নেত্রীকে কারাগারে পর্যন্ত নিয়েছে। যে শক্তি সংগঠন বলতে যা বোঝায় সেটা নষ্ট করতে পারেনি। আর আরেকটা হচ্ছে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস। এ সময়টা বিএনপির জন্য পরীক্ষার সময়। এই দুই ভাইরাসকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। এই ভাইরাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে চিন্তা করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে বলেন, আমার মনে হলো কোনো একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী আসছে। কথাটি আমি অন্যভাবে বললাম। এমনভাবে তাকে রিসিভ করা হয়েছে। আমাকে আমার ছেলে জিজ্ঞাস করল লোকটা কে এবং কেন আসছে? আমি বললাম সে বিশেষ দেশের লোক। যখন আসছে আমার মনে রাখতে হবে সে কোনো উপকার করার জন্য আসেনি। বরং ক্ষতি করার জন্য আসছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে দেশটাকে শেষ করে দেয়া। এখন আমাদের কাজটা কী? এসময় আমাদের কাজ হচ্ছে নিজেদের সুসংগঠিত করে এই হায়না বাহিনীকে প্রতিরোধ করা ও প্রতিহত করা।

তিনি বলেন, আমরা করোনার জন্য বাইরে বের হতে পারি না, কথা বলতে পারি না, কাজ করতে পারি না। এই করোনার মধ্যে যদি আওয়ামী লীগ দেশকে একেবারেই ধ্বংস করা শুরু করে দেয়। তাহলে কিন্তু এই করোনা টরোনা মানা যাবে না যদি সম্ভব হয়। হয়ত আমি বেশি বলে ফেললাম। যদি বলেন আপনি নামবেন কিনা? নিশ্চয়ই বের হব।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সম্প্রতি একজন বলেছেন তাকে জিয়াউর রহমান মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমার প্রশ্ন তখন তার বয়স কতছিল? ৩৩/৩৪ বছর। সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রখ্যাত নেতাও না। অথচ ওই এলাকায় প্রখ্যাত নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান, মবিন তালুকদারের মতো প্রখ্যাত নেতা ছিলেন। তাদের খোঁজখবর না নিয়ে তার খবর নিলেন, তাকে মন্ত্রী সভায় আহ্বান করেছেন-এটা একান্তই ভুতুরে গল্প।

ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সারাদেশের জেলা মহানগর উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে পদায়ন করার প্রস্তাব করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাবেক নেতাদের ঢাকায় অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়ন না করে সারাদেশের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে স্থান দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এতে নেতৃত্বও বিকাশ ঘটবে। এখন শ্লোগান হতে হবে ‘চল পাল্টাই’ অথবা ‘হটাও ষড়যন্ত্র; ফেরাও গণতন্ত্র’।

ভার্চুয়াল সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বক্তব্য দেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন -বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com