১৮ আগস্ট, ২০২০ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য
মহান স্বাধীনতার ঘোষক, রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম।
মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছে। গত ১৫ আগস্ট সরকার প্রধান কর্তৃক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সে অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হ’ল। অবশ্য বহুদিন ধরেই এই ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা চলছে। কিন্তু কখনোই তা হালে পানি পায়নি। আমাদের দেশ তথা গোটা বিশ্ব যখন করোনা আতংকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যমতই যখন সর্বস্তরের জনগণের দাবী তখন সরকারের প্রধান ব্যক্তির মুখে ইতিহাস বিকৃত করার এই ঘৃণ্য অপচেষ্টা গোটা জাতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা নিন্দাভরে এই ঘৃণ্য অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানাই।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে স্বঘোষিত আওয়ামীলীগ সরকার নির্লজ্জভাবে আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে। সীমাহীন নৈরাজ্য, দুর্নীতি, অরাজকতা, করোনা মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতা ও চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে দেশকে নিপতিত করে সরকার আজ দিশেহারা। রাজনৈতিকভাবে চরম দেউলিয়া হয়ে জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে একমাত্র রাষ্ট্রশক্তির ওপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই সরকার। এখন আর বর্তমান সরকারের কোন রাজনীতি নেই। তাই সরকারে টিকে থাকার জন্য তারা অপরাজনীতিতে নেমেছে। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকেই ব্যবহার করে চলেছে দেশের মালিক জনগণের বিরুদ্ধে। বিএনপি’র লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে একের পর এক মিথ্যা মামলা। বিচার- বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, গুম ও খুন আজ সরকারের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। যা জাতিসঙ্ঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধানের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তন করেও আশ্বস্ত নয় এই সরকার। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে সকল গণমাধ্যম ও স্বাধীন মতামতের কন্ঠরোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো জঘন্য আইনের। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দলীয় ক্ষমতার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। আসলে সরকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়া’র জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। এত অত্যাচার, নির্যাতনের পরেও দেশব্যাপী বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও গণভিত্তির তথ্য সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকার যতই অবগত হয়, ততই তাদের আক্রোশ বাড়ছে বিএনপি তথা দেশবাসীর প্রতি। আর সেই আক্রোশ থেকেই ইতিহাস বিকৃতির এ ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বর্তমান সরকার। ১৯৭১ সালে আমরা যে গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, গত এক দশকের অধিককাল ধরে বর্তমান সরকার সেই চেতনাকে হিমাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেই চেতনাকে বিনষ্ট করে দিয়ে তারা একটি ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্ষমতাসীনরা এখন মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
১৯৭১ সালে জাতি যখন নেতৃত্বহীন, কাণ্ডারীশূন্য হয়ে দিশেহারা, ঠিক তখনই ২৬ শে মার্চ জীবনের তোয়াক্কা না করে মেজর জিয়াউর রহমান অকুতোভয়ে স্বকন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এবং সম্মুখ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন। যিনি পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিলেন, বিশৃংখল সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন, স্টেটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় ও রাজনীতিতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জনগণের মণিকোঠায় স্থান করে নিলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ যার জানাযায় অংশ নিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করল, সেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেই এখন ১৫ আগস্ট হত্যার সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কারা হত্যা করেছে সেটা শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং এই হত্যার জন্য কোথাও জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ করার মত কিছুই পাওয়া যায়নি। ঐ মামলায় জিয়াউর রহমান কিংবা তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে আসামিও করা হয়নি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের মন ভরছে না, এখন তারা জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়াকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
জিয়াউর রহমান, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের নামে এত সমালোচনা আর অপপ্রচার কেন করে আওয়ামী লীগ? কারণ তারা জানে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়া। জিয়াকে হত্যা করা হয় ৪০ বছর আগে। তাদের অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তাকে ক্ষমতাসীনদের এতই ভয়, যে আজও একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার সাহস রাখে না তারা। আর তাইতো তারা নির্বাচন নিয়ে এত কূটকৌশলে লিপ্ত।
১৫ আগস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপাপ্ত এক আসামীকে দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে সরকারের মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার সকল আসামীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্যকর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এমতাবস্থায় আইনিভাবে এ ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যমূল্য নাই। এ ধরনের পদক্ষেপ বরঞ্চ সংঘটিত বিচারপ্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে। আইনবিরোধী এ ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা আছে তারা সকলেই জানেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড ঘটেছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে। মরহুম রাষ্ট্রপতির শেখ মুজিবুর রহমানের লাশের উপর দিয়েই সেদিন ঐ মন্ত্রীসভার প্রায় সকল সদস্যরাই শপথ নিয়েছিল মোশতাক সরকারের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট এবং ৩ অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী-বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের জাতির উদ্দেশ্য দেয়া দুটি ভাষণ এর সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ বহন করে। সে ভাষণে তিনি মুজিব হত্যাকান্ডকে “এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন” বলে উল্লেখ করেন। হত্যাকারীদেরকে তিনি প্রশংসিত করেন “অসম সাহসী সূর্য সন্তান” হিসেবে। ঐ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল লন্ডনে বসে কী মন্তব্য করেছিলেন তা সকলেরই জানা আছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সুস্পষ্ট যে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগী (বেনিফিসিয়ারি) ছিল খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
মূলত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের অনাকাংখিত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল স্বাধীনতা উত্তর সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা,স্বজনপ্রীতি, দলীয় স্বেচ্ছাচারিতা ও কুখ্যাত রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনের ধারাবাহিকতায়। ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের করুণ কাহিনী। ৭২-৭৫ চলাকালীন সময়ে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা হরণ করেছিল জনগণের ভোটাধিকার। সেই সময় সংসদে একটি বিরোধী দল গঠন পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ শুধু রুদ্ধই করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে সিরাজ শিকদার সহ হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে, যার মধ্যে দিয়ে এদেশে শুরু হয়েছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ধারা। জাসদ ও গণবাহিনীর হাজার হাজার নেতা কর্মীরা সে সময়ে শিকার হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নিষ্ঠুর রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের। জন্ম হয়েছিল বিরোধী মতকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিচারবহির্ভূত হত্যাসংস্কৃতির। ক্ষমতাসীন দল ইতিহাস থেকে কোনো ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করেছে বলে মনে হয় না। তারই ধারাবাহিকতায় ৭২-৭৫ সরকারের বিচার বহির্ভুত হত্যাসংস্কৃতি আজো চলছে। গত ১১ বছরে বর্তমান সরকারের বিচার-বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে প্রায় ৩০০০ প্রাণ। এ সকল হত্যাকাণ্ড সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগ যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। একদিন সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার ঠিকই হবে এ দেশে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
মাজেদের কথিত জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ এর ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটির রেফারেন্স দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকারপ্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক, জিয়াউর রহমান নহে। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।
তাই আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ঘিরে এই অপপ্রচার সম্পূর্ণই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। মাজেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা করা যাবে না।
সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুরা,
বিএনপি ও জিয়া পরিবারের প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মোকাবেলা না করে বর্তমান সরকার শুরু করেছে ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের । জনগণের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার তথা মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রামে আজ বিএনপিই জনগণের কাছে একমাত্র ভরসা। সে কারণেই বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন জনাব তারেক রহমান ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার এক ব্যর্থ অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার। দেশে বিরাজমান নৈরাজ্য, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট ও মানবাধিকার বিরোধী গুম-খুন ও বিচার- বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্যই তারা এই ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে নিয়ে এহেন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও কোটি মানুষের প্রিয় নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এহেন মিথ্যাচার ও তার চরিত্র হননের অপপ্রয়াসে আপামর জনগণ দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত ও অনুরক্তরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত এই ষড়যন্ত্রকে শুধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখানই করছে না, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার দৃপ্ত শপথ ঘোষণা করছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের জন্য বারবার উদ্যোগ নিয়েছেন। মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করাসহ নানা তত্পরতার মাধ্যমে তিনি তার উদ্যোগের এই বার্তা দেশবাসীকে দিয়েছেন বারবার। কিন্তু চলমান অপতৎপরতায় প্রমাণিত হয় ক্ষমতাসীন মহল জাতিকে বিভক্ত করে সংকীর্ণ স্বার্থ অন্বেষণেই ব্যস্ত।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
চলমান করোনা বিপর্যয়, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জাতির এহেন মহাসংকটকালে বিভাজন নয়, দরকার ঐক্যবদ্ধ সম্মিলিত প্রয়াস। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দল হিসাবে আমরা ইতোপূর্বে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে যে অসুস্থ ক্যাম্পেইন ও প্রপাগান্ডা শুরু করা হয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানাই। আসুন দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে সুষ্ঠু গণতন্ত্রে ফিরে যাই। সকলের মত ও চিন্তার স্বাধীনতার ভিত্তিতে সুষ্ঠু গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে একত্রে কাজ করি। আমরা পুনরায় ক্ষমতাসীন দলকে ইতিহাস বিকৃত করার এই ঘৃণ্য তত্পরতা পরিহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের পথে আসার আহ্বান জানাই। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
আল্লাহ হাফেজ।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি