ঝরিয়ে ফেলুন ঘরবন্দি সময়ের বাড়তি ওজন

0

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে অনেকে ঘরবন্দি দীর্ঘ সময়। বাইরে হাঁটাচলা, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। ঈদে রিচফুড খেয়ে অনেকের ওজন বেড়েছে। পুরুষের তুলনায় মেয়েদের ওপর অতিরিক্ত ওজনের প্রভাব বেশি। শারীরিক-মানসিক সমস্যা, হরমোনজনিত নানা জটিলতা দেখা দেয় বাড়তি ওজনের জন্য। ডাক্তার, পুষ্টিবিদ ও জিম এক্সপার্টদের মতামত নিয়ে ওজন কমানোর কার্যকর উপায় জানালেন মোহসীনা লাইজু

ওজন কমানোর চোরাগোপ্তা বা শর্টকাট উপায় নেই। চিকিৎসক, জিম এক্সপার্ট ও ডায়াটেশিয়ানদের মতে- পরিশ্রম করে, ঘাম ঝরিয়ে মেদ কমানো সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। ব্যায়াম, যোগাসন ও ব্যালেন্স ডায়েটই ওজন কমানোর সঠিক উপায় মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এত কিছুর মধ্যেও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে ওজন কমানো অনেক সহজ।

ব্যায়াম ও খাবার

প্রতিবার খাবারে প্রোটিন, ফ্যাট এবং অল্প কার্বোহাইড্রেটযুক্ত সবজি রাখুন। এগুলো সুস্থ, সবল রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। মাংস, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, ডিম ও দুধÑ এসব খাবারে প্রোটিন থাকে। নিয়মিত এসব খাবার খান। অল্প কার্বোহাইড্রেটযুক্ত সবজির মধ্যে ব্রোকলি, ফুলকপি, পালংশাক, বাঁধাকপি, শিম, লেটুস, শসা, গাজর, ইত্যাদি বেশি খান। মিষ্টিজাতীয় খাবার শরীরে ইনসুুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইনসুলিন শরীরে চর্বি সংরক্ষণের প্রধান হরমোন। দেহে ইনসুলিন বেড়ে গেলে হজম প্রক্রিয়া ধীরে হয়। কমব্যাট জিমের স্বত্বাধিকারী ও প্রশিক্ষক শামীমা আক্তার তুলি জানালেন, নিয়মিত ব্যায়াম ও সঠিক খাবার ওজন কমায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ঘাম ঝরানো হাঁটার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সাঁতার কাটতে পারেন। ঘরে স্কিপিং করতে পারেন প্রতিদিন ১০ মিনিট। প্রয়োজনে ১৫ মিনিট ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যায়। ট্রেডমিলে দৌড়াতে পারেন ১৫ মিনিট। যে ধরনের ব্যায়াম একজন মানুষের জন্য সহজ এবং সহ্য ক্ষমতার মধ্যে, ততটুকু করলেও চলবে। নিয়মিত হাঁটাচলা, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, অল্প দূরত্বে গাড়ি বা রিকশা পরিহার করে হেঁটে চলার অভ্যাস করতে হবে। শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে নিন। প্রয়োজনে ফিটনেস এক্সপার্টদের পরামর্শও নিতে পারেন।

সংযম ও ইচ্ছাশক্তি

ইচ্ছাশক্তি আর সংযম থাকলে সহজে ওজন কমানো যায়। এক্ষেত্রে ব্যালেন্সড ডায়েটের ওপর জোর দিতে হবে। কেয়ার মেডিকেল কলেজের নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েট কনসালট্যান্ট তাসরিয়ার রহমান রিয়েল জানালেন, খাবার তালিকায় প্রোটিন থাকবে, তেমনি ফ্যাট ও শর্করাও রাখতে হবে পরিমাণমতো। সে ক্ষেত্রে ফ্যাট গ্রহণ করুন প্রয়োজনীয় মাছ-মাংস বা রান্নায় যেটুকু তেল লাগছে তা থেকেই। মেডিটেশন ও কোনো সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। মানসিক চাপ কমবে। সারা দিনের স্ট্রেস থেকেও শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মেদ জমে। শরীরে কতটা পানির প্রয়োজন তা জেনে সেই পরিমাণ পান করুন। যতটা লবণ খান, তার চেয়ে ১০ গ্রাম লবণ কমিয়ে দিন খাবারে। শরীর খুব বেশি পরিমাণ লবণ না পেলে শরীরে পানি জমাতে পারবে না। ফলে পানি জমে শরীর ফুলে যাবে না। সকালের খাবার হবে প্রোটিনসমৃদ্ধ। দিনের মেন্যুতে মাংস থাকলে সকালেই তা খেয়ে নিন। দুপুরে ও রাতে মাছ, ডিম আর ডাল রাখুন। রাত ৮টার পর শর্করা খাবেন না। ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিন। খাবারের সঙ্গে আলাদাভাবে চিনি বা কাঁচা লবণ খাবেন না। সঠিক ওজনে ফিরে আসতে বেশি করে ফল আর সালাদ খান। দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন।

ডায়েট চার্ট

অনেকে চেষ্টাও করেও ওজন কমাতে পারেন না। হয়তো নিয়মমতো খাওয়া-দাওয়া, হাঁটাচলা হয়নি। যারা হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন তারা বেছে নিতে পারেন নানা ধরনের ডায়েট চার্ট। এর মধ্যে জনপ্রিয় ক্র্যাশ ডায়েট, কিটো ডায়েট, মিলিটারি ডায়েট। এসব ডায়েট চার্টের কোনো একটা মেনে চললে সহজেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওজন কমানো সম্ভব। তবে এসব ডায়েটেরও ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ও পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বললেন, ‘বিভিন্ন ধরনের ডায়েট আসলে স্বল্পমেয়াদি খাদ্যনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। কঠোর খাদ্য নিয়ন্ত্রণের ফলে ওজন দ্রুত কমবে ঠিকই, কিন্তু এ কারণে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য আসে ঠিকই, কিন্তু কম সময়ের মধ্যে আবার আগের ওজন ফিরে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওজন আগের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এজন্য ক্র্যাশ ডায়েট ১০ দিনের বেশি না চালানোর জন্য সতর্ক করা হয়। খুব বেশি দিন এ ধরনের ডায়েট করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছাড়াও বাহ্যিক সমস্যা দেখা দেয়।

শর্টকাট নয়

প্রায়ই শোনা যায়, একদিনে দেড় কেজি ওজন কমানোর দুর্দান্ত উপায়, এক সপ্তাহে সাত কেজি ওজন কমাবেন যেভাবে। সিøমিং-টি কিংবা লেবু দিয়ে প্রতিদিন এক কেজি ওজন কমানোর জাদুকরী উপায়। অতিরিক্ত ওজন কমাতে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে নানা ধরনের উপায় খুঁজে নেন। এভাবে দ্রুত ওজন কমানোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ডা. অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলেন অনেকেই। ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেন। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ওজন কমাতে নিয়মমাফিক ধৈর্য সহকারে চেষ্টা করতে হবে। শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শারীরিক কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসা নিতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া ও পরিশ্রম। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া-দাওয়া ওজন বাড়ায়। পেট কিছুটা খালি রেখে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। নিয়মিত খাবার ও শারীরিক পরিশ্রম- এ দুইয়ের সামঞ্জস্য থাকা খুবই জরুরি। সুষম খাদ্য গ্রহণ করা ভালো। পরিমাণ মতো কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং কম চর্বি থাকতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা শ্রেয়। ফলমুল, শাক-সবজি বেশি বেশি খাওয়া ভালো, তাতে চর্বি ও শর্করামুক্ত খাবার কম খাওয়া হবে এবং প্রোটিনের চাহিদাও মিটবে। খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেন থাকে।

টিপস অ্যান্ড ট্রিকস

খাবার প্লেটের আকৃতি ছোট করুন। যে প্লেটে খাবার খান সেটার আকৃতি যদি ছোট হয় তাহলে কম খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে।

দেহে কিছু পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। মাল্টি ভিটামিন নিয়মিত গ্রহণ করলে ঘাটতি পূরণ হবে। বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমলে ওজনও কমবে।

খাবার ভাগ করে বিরতি দিয়ে খান। একবেলার খাবার দুই ভাগ করুন। প্রথম ভাগ খাবার পর বেশ কিছুটা সময় বিরতি দিন। অপেক্ষা করার পর যদি দেখেন ক্ষুধা আছে তাহলে অন্য ভাগটা খান। এভাবেই বেশি খাবার অভ্যাসটা কমে আসবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com