গণতন্ত্র না থাকলে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়: মির্জা ফখরুল
গণতন্ত্র না থাকলে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। শ্রী কৃষ্ণের যে মূল বক্তব্য, যে কথা গণতন্ত্র, মানবতা শান্তি। শান্তি, মানবতা কখনই আসবে না যদি গণতন্ত্র না আসে। গণতন্ত্র যদি না থাকে তাহলে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নন। এ কারণেই এ দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আজকে আমাদের সবার অস্তিত্বের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই দানবকে (সরকার) সরাতে হবে। এই দানবকে সরাতে না পারলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। সব ধর্ম, জাতি, রাজনৈতিক দল ব্যক্তি বিশেষকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার যে আহ্বান, সেই আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দানবের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে। চলুন লড়াইয়ে মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি।
গতকাল বুধবার (১২ আগস্ট) রাতে হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টামী উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, অর্পনা দাস রায়, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গণতন্ত্রের মাতা অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া প্রায় কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে গণতন্ত্র কখনো বলিষ্ঠ অথবা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জনগণের মুক্তির জন্য নির্দয়ভাবে আমাদের সামনে এগোতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক রাখি বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা এই রাখি বন্ধনের কবলে বাংলাদেশের মানুষ পিষ্ট, নির্যাতিত, অর্থ বিদেশ চলে যায়। এই রাখি বন্ধন দিয়েই আজকে বাংলাদেশের মানুষকে তারা রাখি বন্ধনে আবদ্ধ না করে ক্ষমতার রাখি বন্ধনে আবদ্ধ করে ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে জনগণের অধিকার বঞ্চিত করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তারা স্থায়ী হতে চায়। আমার মনে হয় সত্য, ন্যায় ও গণতন্ত্রের সপক্ষের শক্তি লড়াই হবে, সেই লড়াই আমরা বিজয়ই হবো-এ ব্যাপারে আমি দ্বিধাগ্রস্ত নই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে মানবতাকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছিলেন, অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি সত্য সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। বর্তমানে আমরা যে বিশ্ব দেখছি, এ বিশ্ব কোনো শান্তির বিশ্ব নয়। এই বিশ্ব কোনো সত্যের পূজারী বিশ্ব নয়। এ বিশ্ব অশান্তি অসুন্দরকে নিয়েই শক্তি ধারেরা মানব জাতিকে ওপর নিপীড়ন করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য বাংলাদেশের মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই এক সঙ্গে লড়াই করেছে। সেটি ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। সেটি ছিল সব মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য। এবং রাষ্ট্রের মালিক হবে জনগণ-এই চেতনা নিয়ে সেদিন সবাই স্বাধীনতা যুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ অংশ নিয়েছিল। বাংলাদেশ কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এখানে হিন্দু-মুসলমান একই বৃন্তে দুটো ফুলের মতো বাস করে। হাজার বছর ধরে এই ঐতিহ্য এখানে আছে।
সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে যারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদের আমলেই সেই সব সম্প্রদায়ের মানুষ নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের উপসানলয়কে ধ্বংস করা হয়েছে, তাদের সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে, তাদের সম্পত্তি দখল করে নেয়া হচ্ছে, তাদের যে ন্যূনতম অধিকার তা আজ নেই।
করোনা চিকিৎসার দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া দেশের কোথাও কোনো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নেই। আমার জেলার (ঠাকুরগাঁ) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ছিলেন। গত ৪-৫ দিন ধরে তিনি অসুস্থ। জেলা শহরে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। দিনাজপুরে পাঠানো হয়েছে, সেখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কোনো চিকিৎসা নেই। এখন তাকে ঢাকা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এই সরকার সব দিক দিয়ে শুধু ব্যর্থই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা নষ্ট করে দিয়েছে। কক্সবাজারের ঘটনা দেখেছেন। দেশের কোনো সুশাসন নেই। যে যেভাবে পারছে লুট করছে ক্ষমতাসীনরা। প্রত্যেক প্রজেক্টে কীভাবে লুট করছে। সেই বর্গিদের মতো এরা লুট করছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সকল ধর্মই মানুষের ধর্ম। এই ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। কারণ, কোনো মানুষ যদি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী হন, ধর্ম পালন করে তাহলে সে কোনো দিন মিথ্যা কথা বলতে পারবে না, অন্যায় অত্যাচার করতে পারবে না। কিন্তু এখন আমাদের যে সরকার তাদের জনগণের প্রতি আস্থা নেই। এ কারণে আগের দিন রাতেই ভোট করে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে একটি পরিবর্তন হবে। সেটা ইতিবাচক পরিবর্তন। তাতে করে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।