প্রতিবন্ধী ভাতা তুললেন সুস্থ আ.লীগ নেতা
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোপাল গোস্বামী (৬৫) পায়ে সামান্য ব্যথার কারণে প্রতিবন্ধী সেজে ভাতা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া একই এলাকার জীতেন সূত্রধর (৬২) নিজেকে প্রতিবন্ধী দাবি করে তিনিও ভাতা নিচ্ছেন।
পৌরসভা, সমাজসেবা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলায় ১২ হাজার ৭১৫ জন বয়স্ক, ৩ হাজার ৩৩৩ জন বিধবা ও ৪ হাজার ৮১৩ জন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন।
চলতি বছর এ উপজেলায় ১ হাজার ১২৯ জন বয়স্ক, ৬১৪ জন বিধবা ও ২ হাজার ৩৪ জন প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতাভুক্ত করা হয়। মির্জাপুর পৌরসভায় ১১৮ জন নতুন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোপাল গোস্বামী ও জীতেন সূত্রধর।
পৌরসভা কার্যালয়ের প্রাপ্ত প্রকৃত প্রতিবন্ধী তালিয়কায় গোপাল গোস্বামীর নাম ১৬ নম্বর ও জীতেন সূত্রধরের নাম ৭৪ নম্বরে রয়েছে।
গোপাল গোস্বামীর বই নম্বর ৪০৫১ ও জীতেন সূত্রধরের বই নম্বর ৪১০৯। তারা জুলাই-২০১৯ থেকে জুন-২০২০ পর্যন্ত ৯ হাজার টাকা করে ভাতা উত্তোলন করেছেন।
গোপাল গোস্বামী মির্জাপুর পৌর এলাকার আন্ধরা মাঝিপাড়া গ্রামের মৃত খিতিশ গোস্বামীর ছেলে ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জীতেন সূত্রধর একই ওয়ার্ডের সূত্রধর পাড়ার মৃত নবদ্বীত সূত্রধরের ছেলে। জীতেন সূত্রধর একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী।
গোপাল গোস্বামী মির্জাপুর সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য। তারা প্রতিবন্ধী না হয়েও প্রতিবন্ধী তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জীতেন সূত্রধর জানান, পুত্রবধূ কিভাবে তার নাম প্রতিবন্ধী তালিকাভুক্ত করেছেন তা তার জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোপাল গোস্বামী নিজেকে প্রতিবন্ধী দাবি করেন। কিভাবে প্রতিবন্ধী জানতে চাইলে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি আহত হয়েছিলেন। পায়ে ব্যথা আছে। চিকিৎসকের দেওয়া প্রতিবন্ধী কার্ড আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ব্যবস্থাপত্র আছে। প্রতিবন্ধী কার্ড নেই।
মির্জাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম মিয়ার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহামুদ বলেন, তারা গোপাল গোস্মামীকে চেনেন। তিনি প্রতিবন্ধী হওয়ার মতো কোনো কারণ তাদের জানা নেই। তারপরও প্রতিবন্ধী ভাতা উত্তোলন করা দুঃখজনক।
মির্জাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, জরিপ ব্যাতীত কাউকে ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয় না। এরপরও কেউ প্রতারণা করে ভাতার আওতাভুক্ত হয়ে থাকলে যাচাই-বাছাই করে বাতিল করা হবে। তবে তাদের নামে কোনো জরিপ রিপোর্ট জমা নেই বলে তিনি জানান।
মির্জাপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র চন্দনা দে বলেন, প্রতিবন্ধীদের যাচাই-বাছাই করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক। তার (মেয়রের) প্রতিবেশী জীতেন সূত্রধর ও গোপাল গোস্বামী। তারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক জানান, প্রতিবন্ধীদের নামের তালিকা পৌরসভার মেয়র প্রস্তুত করে সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জেনেছেন। তারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী কিনা তা সঠিক যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।