ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে বাংলাদেশের মুক্তি নেই : ডা. জাফরুল্লাহ
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ভারত প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশীদের মারলেও আমাদের কোনো আওয়াজ নেই। অথচ নেপাল এ বিষয়ে সংসদে আইন করে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাই ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে বাংলাদেশের মুক্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল রোববার (৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত ‘খরাকালে পোড়াও, বর্ষাকালে ভাসাও’ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের এই নীতি প্রয়োগের প্রতিবাদে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিন ভারত সীমান্তে লোক মারছে, আমাদের কোনো আওয়াজ নেই। অথচ নেপাল এ বিষয়ে সংসদে আইন করে ভারতে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমাদের কোনো কোনা মন্ত্রী বলছেন ভারতে সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু এ রক্ত তো দূষিত রক্ত। দুষিত রক্ত দিয়ে কি হবে? পরিচ্ছন্ন রক্ত দরকার।’ ‘দুষিত রক্ত থেকে আমাদের মুক্তি দরকার।’
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকান্ডের বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এটা কি ওসি প্রদীপের ঘটনা, নাকি এর সাথে ভারতীরা যুক্ত আছে। এটাকে পরিষ্কারভাবে পরীক্ষা করা দরকার। এ জন্য পুলিশি তদন্ত দিয়ে হবে না। একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। ১০ শতাংশ পুলিশ আছে যারা প্রদীপের মতো, বাকিরা সৎজন। এ ঘটনায় যদি কমিশন গঠন না হয় সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।’
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখে আছি। সম্প্রতি ঈদ গেলো। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তীদেশে ২৫ কোটি মানুষ তাদের নিজের ধর্ম পালন করতে পারেনি। তারা গরুর মাংস খেতে পারলো না। চোখ অন্ধ ভারত ২৫ কোটি মুসলমানকে ধর্ম পালন করতে দিচ্ছে না।’
‘একটা কাল্পনিক কাহিনীকে ভিত্তি করে তারা রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে। মহাভারত, রামায়ন দুটার মধ্যেই প্ররোচনা ও মিথ্যাচারের গল্পকাহিনী রয়েছে। তাদের গল্পকাহিনীর উপর ভিত্তি করেই ৫০০ বছরের পুরোনা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে আজগুবি রাম মন্দির নির্মাণ করেছে ভারত। এটা জাতির জন্য একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা বাংলাদেশ এটার বিরুদ্ধে একটা কথাও বলিনি।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের হাইকোর্টের রায় ছিলো মন্দির যেমন হবে তার চেয়েও বড় করে অযোদ্ধ্যা মসজিদ করতে হবে। মন্দির তৈরি হলেও মসজিদ তৈরির কোনো কিছুই নেই, এটাই হচ্ছে ভারত।’
প্রবীণ এ চিকিৎসক বলেন, ‘১৯৭১ সালে রমনার কালি মন্দির পাকিস্তানীরা ভেঙ্গে দিয়েছিলো। শেখ সাহেব (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) এটাকে ঢাকার বাইরে নিয়ে বড় আকারে এ মন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সংখ্যালঘুদের আপত্তিতে তা সরানো হয়নি। এটা ঢাকার নওয়াবদের দান করা জায়গা।’
তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের এ সহনশীলতা থেকে ভারতের কিছুটা হলেও শিখা উচিত। কিন্তু তারা শিখবে না, তাদের শেখাতে হবে। শেখাতে হলে আজকে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য আজকে আমরাদের সব রাজনৈতিক দলেরা শুধু সমাবেত হওয়ার কথা বলে কিন্তু প্রতিববাদ…. আমাদের উচিত ছিলো যে দিন রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হলো সেদিন ভারতীয় হাইকমিশন ঘোরাও করা। এইসব হচ্ছে আমাদের ব্যর্থতা।’
ভাষানী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, সাপ্তাহিক জয়যাত্রার নির্বাহী সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, বাসদ নেতা বজলুর রশিদ, মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম রিপন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য আক্তার হোসেন প্রমুখ।