১০ প্রজাতির ২৮৮টি বন্য প্রাণীর চামড়া উদ্ধার
বাইরে থেকে দেখলে যে কারও মনে হতে পারে কারুকাজখচিত শৌখিন তৈজসপত্র বা হস্তশিল্পের বিপণিবিতান। একশ্রেণির ক্রেতার কাছে এসব সামগ্রীর চাহিদাও বেশ। তবে এসব পণ্যের আড়ালে বিপণিবিতানটিতে দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি হয়ে আসছিল চিতা বাঘ, লজ্জাবতী বানরসহ অন্তত ১০ প্রজাতির বন্য প্রাণীর চামড়া।
গতকাল শাহবাগের পরীবাগ এলাকায় ডিআইটি সুপারমার্কেটে ক্র্যাফটস কর্নার নামের বিপণিবিতানটিতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ প্রজাতির ২৮৮টি বন্য প্রাণীর চামড়া উদ্ধার করেছে বন অধিদপ্তর ও র্যাব-৩। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম।
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্য প্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা বিপণিবিতানটিতে অভিযান শুরু করেছিলেন বেলা দেড়টা থেকে। প্রথমে ক্রেতা সেজে বন্য প্রাণীর চামড়া চাইলে দোকানের বিক্রয়কর্মীরা লুকিয়ে রাখা বাক্স থেকে তা বের করে দেন। কয়েকটি প্রাণীর চামড়া বের করে দেওয়ার পর সন্দেহ হয়েছিল এই দোকানে আরও চামড়া আছে। পরে র্যাবের সহযোগিতায় সেখানে অভিযান চালিয়ে ২৮৮টি চামড়া উদ্ধার করা হয়।
দেখা গেছে, হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী দোকানটিতে থরে থরে সাজানো। আছে কাঁসা ও পিতলের তৈজসপত্রও। আরও ছিল বিভিন্ন পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি নারী ও পুরুষের নিত্যব্যবহারের জিনিসপত্র। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে বিক্রি নিষিদ্ধ প্রাণীর চামড়াও বিক্রি হচ্ছে।
অভিযান শুরুর পর দোকানের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হরেক রকম প্রাণীর চামড়া পাওয়া যায়। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত চামড়াগুলো জব্দ করে বিপণিবিতানটি সিলগালা করে দেন। একই সঙ্গে দোকানের মালিক মনিরুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবিরকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অভিযান চলাকালে দেখা যায়, যেসব প্রাণীর চামড়া দোকানটিতে বিক্রি হচ্ছে তার বেশির ভাগ চামড়াতেই গুলির চিহ্ন রয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, একটি চক্র সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব প্রাণী হত্যা করে চামড়া বিক্রির কাজ করে আসছিল।
অভিযানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিপণিবিতান থেকে ১টি চিতা বাঘের চামড়া, ১টি মেছো বাঘের চামড়া, ১টি বনবিড়ালের চামড়া, ২টি লজ্জাবতী বানরের চামড়া, ২২৭টি গুইসাপের চামড়া, ১টি হরিণের শিং, ২টি সাপের চামড়ার মানিব্যাগ, হরিণের চামড়ার ৩২টি মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগের মতো জায়গায় তারা বিক্রি নিষিদ্ধ এসব চামড়া বিক্রি করছে, এটা খুবই দুঃখজনক। এসব বন্য প্রাণীর চামড়ায় গুলি করে হত্যার চিহ্ন রয়েছে। এই অপরাধের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী দোকানের দুই মালিককে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দুজনকে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সারওয়ার আলম আরও বলেন, এসব চামড়ার ক্রেতারা নির্দিষ্ট একটা শ্রেণির। এগুলো বিক্রিতে যাঁর কাছ থেকে যত বেশি টাকা নেওয়া যায়, তা–ই নেওয়া হচ্ছে। কোন কোন স্থান থেকে এসব প্রাণীর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বন্য প্রাণী পাচার ও শিকারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।