যে গুলি করে সেই কি ক্রসফায়ার বা হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, না সিদ্ধান্ত অন্য কোথাও থেকে আসে?
এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় গুম-খুন-ক্রসফায়ার এবং এ বিষয়ক মিথ্যাচার সম্পর্কে সবচেয়ে সাহসী আলাপগুলির মূল সুর হলো, এইসব খুন এবং মিথ্যাচারের সাথে যারা সম্পর্কিত তাদের বিচার দাবী করা,। আরো অগ্রসরদের কেউ কেউ এইসব খুন বন্ধ করার দাবীও করেন,। কিন্তু এসব খুন মাঠে যারা বাস্তবায়ন করেন, আসলে কি তারা নিজেরাই এই খুনগুলি করার সিদ্ধান্ত নেন?
খুন হওয়ার পর মিডিয়ায় প্রকাশের জন্য যে বিবৃতিগুলি আসে সেগুলি কি মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়নকারীরা প্রদান করেন, নাকি তার জন্য কারো অনুমোদন লাগে?
এইসব খুন করাকে বাহিনীগুলির রুটিন-ওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা, বাহিনীগুলিকে সেই রকমভাবে প্রস্তুত করা কি কোনো একজন-দুইজন শ্যুটারের কাজ, নাকি এর অন্যরকম ট্রেনিং ম্যানুয়েল প্রস্তুত করা লেগেছে? এর জন্য প্রচলিত বিচারিক কাঠামোকে পাশ কাটাতে বড় বড় আইন বিশারদ, বিচারক বা বিচার সংশ্লিষ্টদের বা বিচার বিভাগের গোপন সম্মতি আদায় করা লেগেছে, নাকি বিচার বিভাগ নিজে নিজেই মুখে কুলুপ এটে বসেছে?
আওয়ামীলীগের এখনকার স্ব-ঘোষিত এমপি, মন্ত্রীরা যে সংসদে ক্রসফায়ারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, এখানকার সাংবাদিকদেরও কেউ কেউ যে ক্রসফায়ারের পরে এলাকার জনগণের স্বস্তি প্রকাশের ভাষা হিসাবে মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ-উল্লাসের ছবি ছাপেন, এটা কি মাঠ পর্যায়ের ক্রসফায়ার বাস্তবায়নকারীদের নির্দেশে, নাকি এর পেছনে দীর্ঘ ইন্ধন থাকে?
প্রত্যেকটা রাষ্ট্রীয় নৃশংসতার পরে যে কিছু মানুষ এর পক্ষে দাঁড়ায়ে যায় এটা কি শুধুই রাজনৈতিক অজ্ঞতা, নাকি নানা বাহিনীর নানা চটকদার বিজ্ঞাপন বা আওয়ামী সরকারের সন্ত্রাস নির্মূলের নামে নানা কিসিমের অসততাও এর পেছনে কাজ করে? সর্বোপরি, এ পথেই কি রাষ্ট্র চলবে, নাকি সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে একে ঠিক পথে পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে এবং এসব বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করা লাগবে? সাম্প্রতিক সময় এসব বিষয়ের পোষ্টমর্টেমই কিন্তু দাবী করে,।
আসুন মনে রাখি, দেশটা শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দানব-দুর্বৃত্ত আর তাদের দেশী-বিদেশী পৃষ্ঠপোষকের নয়, যারা দূরে বসে কাকে মারা হবে, কিভাবে মারা হবে আর কে মারবে সেইসব ভয়াবহ সিদ্ধান্তের ছক প্রতিদিন কষছে,। আর মনে রাখি মানুষগুলি যারা মৃত্যু বরণ করছে—শেষ পর্যন্ত কিন্তু তারা আমাদেরই ভাই, বন্ধু, আত্মীয়, সন্তান,।
-ডালিয়া লাকুরিয়া