কোরবানির মাংস বণ্টনে অনিয়ম, প্রতিবাদ করায় রক্তাক্ত ডুজার সাধারণ সম্পাদক
ঝিনাইদহের মহেশপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসাইনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। কোরবানির মাংসের অংশ মিসকিনদের বণ্টনে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হামলায় তার ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আকরাম হোসাইন ও তার বাবা আহত হয়েছেন। বর্তমানে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে কোরবানির মাংস বণ্টন শেষে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার ইমরান হোসাইন বলেন, কোরবানি শেষে গ্রামবাসী মিসকিনদের অংশ সমাজের একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে। এর মধ্যে কিছু মাংস নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। কিছুটা মিসকিনদের মধ্যে সেটি বিতরণ করে। আর এর তদারকি করেন স্থানীয় বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান।
‘মিসকিনদের কিছু মাংস বিতরণ করার পর প্রায় ২০ কেজি মাংস মেম্বার (ইউপি সদস্য) রেখে দেন নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে। মাংস নিজের (মেম্বার) বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবাদ করলে দলবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়’, বলেন ইমরান।
এ বিষয়ে আজ রোববার থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ইমরান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং সংবাদ সংস্থা ইউএনবিতে কর্মরত আছেন।
ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ইমরান লেখেন, ‘জাস্ট স্পিসলেস, কোরবানির মাংসের মিসকিনদের অংশ বণ্টনের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় মেম্বার এবং তার পালিত গুন্ডাদের নৃশংসতা। কোরবানির মাংসও লুট করতে হবে। ছোটবেলা থেকে বাড়ির বাইরে থাকায় এদের বর্বরতা সম্পর্কে কোন আইডিয়াই ছিল না। লকডাউন সময়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যারা যোগাযোগ করেছে যতটুকু সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিম্তু আমার নিজের সঙ্গেই যে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে সেটা কখনো কল্পনাতেই আসেনি। এই মানুষরূপী হায়েনাদের নৃশসংতার শেষ কোথায়।’
অভিযোগের বিষয় জানতে ওই ইউপি সদস্য আজিজুল রহমানকে ফোন করা তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগত প্রকাশ করেন।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। এ ঘটনায় গত ১ আগস্ট রাতে ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আদনান আজিজ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবাদ জানানো হয়।
যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, ‘নিজ বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার অন্তর্গত বাঁশবাড়ি ইউনিয়নের গাড়াপোতা গ্রামের স্থানীয় মেম্বার কর্তৃক নৃশংসতার শিকার ইমরান ও তার ছোট ভাই আকরাম। তাদের দোষ ছিল তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। পবিত্র ঈদের দিন কোরবানির গোশত নিয়েও অনিয়ম হচ্ছে। গ্রামের দুঃখী-দুস্থদের কোরবানির গোশত নিয়ে অনিয়ম করা বৈধতা পায়, যখন হামলাকারী নির্বিঘ্নে চলাচল করে আর সাংবাদিক ইমরান প্রতিবাদ করায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরায়। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দ্রুততম সময়ে হামলার সঙ্গে যুক্ত মেম্বারকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’