বালিশকাণ্ডের দায় মন্ত্রণালয়ও এড়াতে পারে না: আইইবি সভাপতি
পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালিশকাণ্ডসহ দুর্নীতির দায় মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) প্রেসিডেন্ট সবুর বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশকাণ্ডের মত ঘটনার দায় প্রকৌশলীদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়েরও।
শনিবার আইইবির পুরকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আবদুস সবুর বলেন, “বালিশকাণ্ডের দায় শুধু প্রকৌশলীদের একার নয়, এই দায়ভার মন্ত্রণালয়েরও রয়েছে। বালিশকাণ্ড ঘটার পর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) তাদের বক্তব্য জনগণের সামনে তুলে ধরেনি। তারা এই বিষয়টি জনগণের সামনে পরিষ্কার করেনি।
“তবে এই বালিশকাণ্ডের মত যেন আর কোনো ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে সেদিকে প্রকৌশলীদের সাথে মন্ত্রণালয়েরও কড়া নজর রাখতে হবে। এসব ঘটনার জন্য যেন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”
রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মাণাধীন গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাব ও প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা ও ভবনে উত্তোলন কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে গত ১৯ মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
দুর্নীতির নমুনা তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে বালিশের দাম ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা, আর আর সেই বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ ৭৬০ টাকা দেখানো হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুই কমিটির তদন্তেই ৬২ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অনিয়মের কথা উঠে আসে। হাই কোর্টের নির্দেশে গত জুলাই মাসে আদালতে জমা দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির জন্য ৩৪ জন প্রকৌশলীকে দায়ী করা হয়।
গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা ভবনে তোলায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ মে একটি দৈনিক ‘কেনা-তোলায় এত ঝাঁজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা।
প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা। রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি খাট কেনা দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। আর খাট ওপরে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা।
প্রতিটি টেলিভিশন কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা। আর টেলিভিশন ওপরে ওঠাতে দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬৩৮ টাকার খরচ। বিছানার খরচ ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা দেখানো হয়েছে; তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। প্রতিটি ওয়ারড্রোব কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা।
আর তা ওঠাতে দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকার খরচ। এরকম বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদ্যুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকও এই দুর্নীতির তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য প্রকৌশলীদের তাগিদ দিয়ে আবদুস সবুর বলেন, “অনেক সময় দেখা যায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অনেক সময় বেশি লাগে। যার ফলে বাজেট আরও বাড়াতে হয়। কিন্তু প্রকল্পগুলো যখন করা হয় তখন প্রকৌশলীরাই এই সময় বেঁধে দেন।
“আমি প্রকৌশলীদের বলব, প্রকল্পের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকু সময় দেবেন। তার চেয়ে কম বা বেশি সময় দেবেন না। তারপর মন্ত্রণালয় কি করবে সেটা তাদের বিষয়। আপনারা (প্রকৌশলীরা) আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।”
আইইবির পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন চিপস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রকিওরমেন্ট স্পেশালিস্ট গোলাম ইয়াজদানী, এলজিইডির প্রকিওরমেন্ট ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম, ন্যাশনাল ট্রেইনার সোনিয়া নওরিন।