খালেদা জিয়ার বাসায় যেতে প্রধানমন্ত্রীকে ডা. জাফরুল্লাহর খোলা চিঠি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ৮ পৃষ্টার ২৬৬৪ শব্দের এই খোলা চিঠি আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু এ তথ্য জানান।
চিঠির বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ লিখেছেন- ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন নাগরিকের খােলা চিঠি’। চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের দিন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে তাকে দেখতে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। লিখেছেন-‘ঈদের দিন সময় করে সুস্বাস্থ্য কামনা করতে খালেদা জিয়ার বাসস্থানে যান, এতে দেশবাশী খুশি হবে এবং বঙ্গবন্ধু হেসে বলবেন, ভাল করেছিস, মা।’
চিঠির শুরেতে তিনি লিখেছেন- অতীতে আপনার সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এই খােলা চিঠি লিখছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর (PMO) দফতরের কেউ না কেউ আমার এই খােলা চিঠিটি আপনার নজরে আনবেন এবং আমি একটি প্রাপ্তি স্বীকার পত্র পাব। প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটাই একজন নাগরিকের আকাংখা।
হাসপাতালের কিছু বিষয় অবহিত করে লিখেছেন, রােগীর হাসপাতালে ভর্তির জন্য কোন দেশে তাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমােদন লাগে না। কোভিড-১৯ আক্রান্তই হােক অথবা কোভিড মুক্ত অন্য কোন রােগাক্রান্ত রােগীর হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেন উক্ত হাসপাতালের পরিচালক। কার্যতঃ ডিউটিরত চিকিৎসক, নার্স বা ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসার। কিন্তু বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রােগী হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে কিনা। তার সিদ্ধান্ত দেন স্বাস্থ্য অধিদফতর, রােগী নিজে বা চিকিৎসক নন। কেন্দ্রীকতার এরূপ নিদর্শন পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। অপূর্ব সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীকতা দুর্নীতির সহজ বাহন।
হাসপাতাল অনুমােদিত না হবার কারণ সমূহ সম্পর্কেও তিনি লিখেছেন। তাতে বলেছেন- বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমােদন নেই, এমনকি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের, গণ ডায়ালাইসিস সেন্টারেরও।
আলাদা আলাদা অনুমােদন মানে আলাদা তদবির ব্যয়, আলাদা দরাদরি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরী, রােগ নির্ণয় কেন্দ্র অনুমােদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এমন নিয়মাবলী করেছেন যা পুরন সম্ভব প্রায় অসম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থির করে দেন কয়টি পায়খানা, প্রস্রাব খানা থাকবে, কয়জন ডিপ্লোমা পাশ নার্স থাকতে হবে।
চাঁদাবাজির সরকারী নাম লাইসেন্স ফি উল্লেখ করে ফি বৃদ্ধিকে দায়ি করে তিনি লিখেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ গুণ বেড়েছে। কেন হাসপাতালের অনুমােদন থাকলে চলবে না, হাসপাতালের প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা অনুমােদন থাকতে হবে। অনুগ্রহ করে সরকারী চাদা কত বেড়েছে তা লক্ষ্য করুন। হয়রানী ও দুর্নীতি একত্রে চলাফেরা করে।
তিনি বলেছেন, সুলভে যৌক্তিক চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সবার, কিন্তু নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার সরকারের। অনুর্ধ ৫০ হাজার লোক সংখ্যা ইউনিয়নে যদি ২ জন সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত না করতে পারলে, সার্বজনীন চিকিৎসা সেবার কথা ( ইনিভার্সেল হেলথ কভােরজ) চিন্তা করা আকাশ কুসুম মাত্র।
মেডিক্যাল যন্ত্রপাতিও ওষুধের কাচামাল আমদানিতে শুল্ক বৈষম্য দুর্নীতির অপর সোপান বলে উল্লেখ করে বলেন, বিএমআরসি এর চৈনিক ভ্যাকসিন ট্রায়ালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত।
নিজেকে বোকা মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন বােকা মুক্তিযােদ্ধার কামনা, দেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী আপনি কঠিন পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু লক্ষ্য থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছেন। দেশের এই কঠিন সময়ে আপনার নিজ দলের পুরানাে সহকর্মী এবং অন্য সকল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়ে আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে সুশাসনের লক্ষ্যে আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু পরিচ্ছন্ন নির্বাচন। কোন চালাকির নির্বাচন নয়, দিনের নির্বাচন রাতে নয়। হয়তাে বা সফলতা আপনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
ঈদের দিন সময় করে সুস্বাস্থ্য কামনা করতে খালেদা জিয়ার বাসস্থানে যান, এতে দেশবাশী খুশি হবে এবং বঙ্গবন্ধু হেসে বলবেন, ভাল করেছিস, মা।
তিনি জানান, আগামী মাসে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (ICU) সুবিধা নিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (Central Aircondition) ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা সমেত করে সাধারণ ওয়ার্ড (covID-19 General Word) চালু করবে ধানমন্ডী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। রােগীদের সর্বসাকুল্যে দৈনিক খরচ পড়বে তিন হাজার টাকার অনধিক।
আপনি কি এই অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা সমেত জেনারেল ওয়ার্ডের উদ্বোধন করবেন? প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন জাফরুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, সুস্থ থাকুন, আমলা ও গােয়েন্দাদের থেকে সাবধানে থাকুন, রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে ডেকে নিন।