গর্ভধারণে দেরি? কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন
বর্তমান যুগের ব্যাস্ততা, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা আর অর্থনৈতিক চাপের মুখে পরে অনেকেই মা হবার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন। ফলে ৩৫ বয়ষোর্দ্ধ গর্ভবতী মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অধিক বয়সে মা হলে কিছু বাড়তি জটিলতার ঝুকি থাকে। তাই এ বয়সে মা হতে চাইলে আপনাকে এ ঝুকি গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা প্র্যোজোন। একই সাথে পরিবার ও সেবাদানকারীদেরও এ মায়েদেরকে দিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা ও মনযোগ ।
বেশি বয়সে মা হতে চাইলে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন,যেমনঃ
গর্ভধারনে দীর্ঘসূত্রিতাঃ একজন মেয়ে জন্মের সময় কিছু সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় যা সময়ের সাথে সাথে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বানুর সংখ্যা এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এতে করে এ সময়ে গর্ভধারন করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে। তাই ৩০ বছরের পর কেও যদি মা হবার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করার পরও ব্যর্থ হন, তবে দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ডিম্বানু উৎপাদক ঔষধ খেতে পারেন।
জেষ্টেশনাল ডায়াবেটিসঃ গর্ভকালীন সময়ে কোন কোন মা ডায়াবেটিস এ ভুগে থাকেন,একে বলে। অধিক বয়সে গর্ভধারন করলে এর সম্ভাবনা আরও বেরে যায়। কনসিভ করার আগে থেকেই কিছু মা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে কনসিভ করার আগ থেকেই তাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বাচ্চার বিকলংগতা, ওজন বৃদ্ধি ও অধিক মৃত্যু ঝুকির কারন হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপঃ গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মায়েদের গর্ভকালীন সময় উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভকালীন সময় নিয়মিত ব্লাড প্রেসার চেক আপ এর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা এড়ানো যায়। যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্ত চাপের জন্য ঔষধ খাচ্ছেন তাদের উচিত গর্ভধারনের আগেই ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর ঔষধ পরিবর্তন করা।
গর্ভপাতের সম্ভাবনাঃ এ সময়ে গর্ভপাতের হার বৃদ্ধির কারনের মধ্যে রয়েছে মায়ের বিভিন্ন অসুখ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ ইত্যাদি। এছাড়া বাচ্চার জীনগত ত্রুটি বয়স বৃদ্ধির সাথে বাড়ে যা গর্ভপাতের কারন ঘটায়।
সিজারের সম্ভাবনা বৃদ্ধিঃ গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেবার কারনে বয়স্ক মায়েদের সিজারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ভ্রূণের জীনগত ত্রুটিঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে ভ্রুনের জীনগত ত্রুটি হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মায়ের বয়স বৃদ্ধির সাথে ডাউন সিনড্রোম(ক্রোমোজোমাল ত্রুটিপুর্ন বাচ্চা) নিয়ে বাচ্চা জন্মানোর হারও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে দেখা গেছে ২৫ বছর বয়সি মায়েদের ডাউন সিনড্রোম বাচ্চা হবার ঝুকি থাকে প্রতি ২৫০০ জনের মধ্যে একজনের,যা ৪০ বছর বয়সি মায়েদের ক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ১০০ জনে একজন। এমনিয়টিক ফ্লুইড(গর্ভস্ত বাচ্চার চারিদিকের পানি) নিয়ে পরীক্ষা করে কনসিভের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভ্রুনের জীনগত ত্রুটি সনাক্ত করা সম্ভব।
অন্যান্য জটিলতাঃ এছাড়াও মাল্টিপল প্রেগনেন্সি(একাধিক বাচ্চা গর্ভধারন), সময়ের আগেই বাচ্চা হওয়া, গর্ভস্ত বাচ্চার মৃত্যু, কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান ইত্যাদি জটিলতা বয়েসের সাথে সাথে বাড়ে। তবে এ সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিয়মিত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের তত্বাবধানে থাকলে একজন সুস্থ মা পারবেন একটি সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিতে।
ডাঃ নুসরাত জাহান
এমবিবিএস, এফসিপিএস (গাইনী)
সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনি)