নাইজেরিয়ানদের নিয়ে যেভাবে ভয়ংকর প্রতারক হয়ে উঠলেন ঢাবির এই সাবেক ছাত্রী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন রাহাত খানম তূর্ণা । বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১১-২০১২ সেশনের ওই ছাত্রী পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এছাড়া কখনও পরিচয় দিতেন কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাবও খাটাতেন তিনি। তার প্রতারণার সঙ্গী হিসেনে জুটে যায় নাইজেরিয়ার নাগরিকরা। তাদের সঙ্গে নিয়ে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই তরুণী। অবশেষে ধরা খেলেন তূর্ণা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি ১২ নাইজেরিয়ানসহ ওই ছাত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার( ২১ জুলাই) রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী তুর্ণাসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে সিআইডি কার্যালয়ে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল হায়দার।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা ফেসবুকে বন্ধুত্বের নামে অনেক লোকের কাছ থেকে দামি উপহারের লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি এই চক্র বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেফতার নাইজেরিয়ার নাগরিকরা হলেন- নন্দিকা কেনেন্ট, ক্লেটাস আছুনা, ওইউকুলভ টিমটি, একিন উইসডোম, চিগোজি, ইভুন্ডে গ্যাব্রিল ওবিনা, স্যালেস্টাইন প্যাট্রিক, মর্দি ন্যামডি, ওরদু চুকওরদু সাম্মি, ডুবুওকন সোমায়ইনা, জেয়েরেম প্রেসিয়াস একমি, ওক উইসডম।
এদের মধ্যে গ্রেফতার তুর্ণা সব সময় নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিত। তার সাথে সব মহলের সখ্যতা রয়েছে। ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ। এমনকি পুলিশেরও অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা ছিল তুর্ণার। তার বাবা নৌবাহিনীতে কর্মরত। ঢাবির ওই সাবেক ছাত্রী তুর্ণা অনেকসময় ভুক্তভোগীদের কাছে নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন।
প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পার্সেলের শুল্ক বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যাংকে জমা দিতে বলতেন তিনি। গিফট গ্রহণ করা না হলে আইনি জটিলতারও ভয় দেখাতেন তূর্ণা। মূলত প্রতারণার শেষ ধাপে কাজ করতেন রাহাত আরা খানম ওরফে তুর্ণা। চক্রটি প্রথমে বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করতেন। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে একটি ম্যাসেঞ্জার আইডি থেকে পার্সেল গিফট করার প্রস্তাব দেওয়া হত। পরে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমেই এই পার্সেল বুক করার এয়ারলাইন্স বুকিং ডকুমেন্টও পাঠাতো প্রতারকরা।