আ.লীগের আশীর্বাদপুষ্ট প্রতারকদের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভুলুণ্ঠিত: ফখরুল
বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, করোনা মহামারির এই চরম মানবিক বিপর্যয়ের সময়ও দেশব্যাপী চলমান আকণ্ঠ দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি আরো চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহ সংশ্লিষ্ট সকলে যখন করোনা টেস্টের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট প্রতারক মহল কর্তৃক ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদানের লোমহর্ষক কাহিনী উন্মোচিত হলো।
তিনি বলেন, শাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল এবং আরিফ ও সাবরিনার জেকেজি পরীক্ষা না করেই মানুষকে বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যে হাজার হাজার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে তাতে একদিকে সংক্রমণের হতাশাব্যঞ্জক ঝুঁকিতে পড়েছে গোটা জাতি, অন্যদিকে বিশ্ব দরবারে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকটি দেশে বাংলাদেশী যাত্রীরা পড়েছে সঙ্কটে। বাংলাদেশের বিমানবন্দর পার হয়ে যাওয়া কিছু যাত্রীর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা নিষিদ্ধ করেছে। এ পর্যন্ত সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোর মধ্যে আছে ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে সব দেশই কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশ্বের বহু দেশ প্রধানত নেতৃত্ব ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো বাংলাদেশ সেটা পারেনি।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণাটি কেবল প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যাই নয়, এর সাথে বিদেশী বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রত্যেক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষয়টির দারুণভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া করোনার আগে উড়োজাহাজ ভর্তি করে যারা বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন, তাদের অনেকেরই ফিরে আসার ব্যাপারটি কিন্তু বাংলাদেশের করোনা ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। পর্যটন খাত পুনরুজ্জীবন এবং তার আরো বিকাশ, কিংবা বিদেশে শ্রম বাজারের আরো সম্প্রসারণের সঙ্গেও এ বিষয়ের একটি যোগসূত্র রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে যাওয়া বাংলাদেশ বিমানকে তারা করোনাভাইরাসবাহী বোমা বলে আখ্যায়িত করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষার ভুয়া সনদ বাণিজ্য’কে কেন্দ্র করে ইতালির প্রথমসারির গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবাসীরা ইতালিতে গেছেন বলে শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের সবার কাছে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছিল। ইতালির বিমানবন্দরের পরীক্ষায় পজেটিভ আসার পর তারা স্বীকার করেন, ঢাকা থেকে তারা সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ, ১০ বা আরো বেশি পরিমাণ টাকা দিয়ে করোনা নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ করেছেন। এতে যারা ইতালির বাইরে আছেন, ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তারা যেতে পারছেন না। তাদের কাজ থাকা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কাগজ-পত্রহীনদের বৈধতার সুযোগ দিতে যাচ্ছিল ইতালি সরকার। বাংলাদেশীদের জন্যে সেই সুযোগ কতটা কার্যকর থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এর ফলে ইতালিতে যে সকল বাংলাদেশী অভিবাসী (immigrants) অবস্থান করছেন, করোনামুক্ত সার্টিফিকেট ছাড়া তারা কাজে যোগদান করতে পারছেন না। এ নিয়ে প্রবাসী শ্রমিক ও বাংলাদেশী অভিবাসীরা মহাসঙ্কটে রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এদিকে রিজেন্ট ও জেকেজির ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট দেয়ার মতো ঘটনায় মানুষজন রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ফলে অনেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় টেস্ট করানোর পরিবর্তে বাসাবাড়িতে অবস্থান করে নিজের মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাচ্ছেন। এতে করে অনেকেই করোনায় মারা গেলেও তা হিসাবে আসছে না। ফলে কত মানুষ করোনায় মারা গেল তা বোঝা যাচ্ছে না। এতে যে সমস্যা হবে সেটি হলো, সরকার করোনার প্রকৃত পরিস্থিতিটা বুঝতে পারবে না। পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও প্রশ্ন উঠবে না। মানুষ যেমন বিনা চিকিৎসায়, বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন তেমনই প্রাণ হারাতে থাকবেন। কার্যত দেশে এখন সেই পরিস্থিতিই বিরাজ করছে বলে মনে হয়। কিন্তু এটি কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। এটি অরাজকতা।
তিনি আরো বলেন, শুরু থেকেই সরকারের দৃষ্টিকটু, সমন্বয়হীনতা, অপরিণামদর্শিতা, দোদল্যমনতা, সিদ্ধান্তহীনতা, ভুল সিদ্ধান্তের কারণে করোনা সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো কার্যত অসফল প্রমাণিত হয়েছে।