নকল মাস্ক সরবরাহ করছে ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন!

0

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনা ইউনিটে নকল ‘এন৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করা করা নিয়ে চলছে তোলপাড়। এ কথা স্বীকারও করেছে বিএসএমএমইউ র্কর্তৃপক্ষ। আর এর সঙ্গে নাম জড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী কর্মকর্তার। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত।

জানা গেছে, ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান চীনের ‘থ্রিএম কোম্পানি’র লোগো বসিয়ে এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারীর নাম জানায়নি। অবশ্য বিএসএমএমইউর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারীর নাম শারমিন জাহান।

বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত শারমিন জাহান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজপোর্টালকে ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের’ স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহান বিএসএমএমইউতে মাস্ক সরবরাহের কথা জানান। ওই প্রতিবেদনে শারমিন ঢাবির রেজিস্ট্রার অফিসের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামুজ্জামান জানান, শারমিন জাহান নামে সহকারী রেজিস্ট্রার আছেন। তিনি বলেন, ‘শারমিন রেজিস্ট্রার দপ্তরের কর্মকর্তা। বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে আছেন। তবে বিএসএমএমইউতে নিম্নমানের মাস্ক শারমিন জাহানই সরবরাহ করেছেন কি না জানি না। তার যে অপরাজিতা নামে প্রতিষ্ঠান আছে সেটাও প্রথম শুনলাম।’

এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় শারমিন জাহানের সঙ্গে। তিনি মাস্ক সরবরাহের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি যে প্রোডাক্ট দিয়েছি সেখানে অনেকে প্রডাক্ট দিয়েছে। প্রোডাক্টগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করার পরে আমরা প্রথম হয়েছি। সে প্রেক্ষিতে তারা আমাকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছে। প্রথমে মাস্ক দেওয়ার পরে সবাই প্রশংসা করেছে। কিন্তু তৃতীয় লটের যে অর্ডার দেওয়া হয়েছে, এটা নকল কিনা, তা কিন্তু কোথাও টেস্ট করা হয়নি। নকল কিনা তাও অপ্রমাণিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি কখনো নকল কোন প্রোডাক্ট শেয়ার করতে পারি না। আমি এটা জানার পরে সাথে সাথে ফেরত নিয়ে আসছি। আমি কোন বিল সাবমিট করিনি। অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল কোন মাস্ক বানায় না। এটা অয়্যার হাউজের ভুল। এজন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে।’

পণ্য রিসিভের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এই প্রোডাক্টটা ওইখানে রিসিভ করে রাখছে তারা। তারা কেন রিসিভ করে রাখল, এটা তাদের ভুল। তাদের ভুলটাকে কেন তারা আমার নামে চাপাচ্ছে। প্রোডাক্টটি আমার ফার্মের মাধ্যমে আসলেও আমি জানতাম না এ ব্যাপারে। আমি জানি আমার মাস্ক ভালো। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা সেটা জানি না। এখানে আমাকে কেন এভাবে ফাঁসানো হচ্ছে?’

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনও জানি না। প্রকৃত তথ্য আসলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে নকল মাস্ক সরবরাহের বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিএসএমএমইউ। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘একটা কোম্পানি খারাপ মাস্ক দিয়েছিল। সেগুলো বদল করে ফেলেছি। ওই কোম্পানিকে শোকজ দিয়েছি, উত্তর তারা দিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। কোম্পানির নাম অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল।’ তবে স্বত্বাধিকারীর নাম জানাতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘যারা মাস্ক সাপ্লাই দিচ্ছে, তারা সেগুলো প্রথমে জমা দেয়। সরবরাহ করা মাস্ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারণ করা প্রতিষ্ঠান থেকে টেস্ট করা হয়। টেস্ট করে ওদেরটাই (অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল) টিকেছে। তারা যে স্যাম্পল দিয়েছিল তা টেস্ট করে ঠিক করা হয়েছে।’

উপাচার্য বলেন, ‘প্রথম লটে কোনো সমস্যা হয়নি। দ্বিতীয় লটেও সমস্যা ছিল না। গত ১৮ জুলাই তৃতীয় লটের মাস্ক ব্যবহার শুরু হলে দেখা যায়, কিছু মাস্ক নকল। ডাক্তাররা দেখে সেগুলো নকল। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো তুলে নেওয়া হয়। আমরা এর ব্যাখ্যা চেয়েছি এবং তদন্ত কমিটি করা হয়েছে খতিয়ে দেখার জন্য।’

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আরও বলেন, ‘হাসপাতালের প্রক্রিয়া অনুযায়ীই (মাস্ক) কেনা হয়েছে। তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে, ওদের থেকে আর মাস্ক নেওয়া যাবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউ’র মতো প্রতিষ্ঠানে নকল মাস্ক সরবরাহ করা খুব বিশ্রী ব্যাপার হয়েছে। কারা সাপ্লাই দিল র্কর্তৃপক্ষ বলতে চায় না, কেন বলতে চায় না? তাদের পরিচয় গোপন করতে চায় কেন? অবশ্যই এর তদন্ত হওয়া উচিত।’

জানা গেছে, শারমিন জাহানের জন্ম নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জে। যে কলেজ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন সেখানে ছাত্রলীগের ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদিকা ছিলেন। এরপর ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে। থাকতেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে।

২০০০ সালে তিনি হল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০০২ সালে হল সভাপতি হন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে ছিলেন তিনি। তার আগের মেয়াদে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com