করোনা-বন্যায় দিশাহারা মানুষ, তবুও ভোট
করোনায় মানুষ দিশাহারা। প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যু বাড়ছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে বন্যা। উত্তরের প্রায় সব নদনদীর পানি এখন বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। চরাঞ্চলগুলো বেশ কিছুদিন আগেই পানির নিচে ডুবে গেছে। এমন পরিস্থিতিতেই আগামীকাল বগুড়া-১ আসনের উপ-নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
গত ১৮ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ আসন শূন্য হয়। সংবিধানের ১২৩(৪) ধারা অনুযায়ী সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্তু করোনার কারণে ওই সময়ের মধ্যে এই আসনে ভোটগ্রহণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এখন করোনা পরিস্থিতির সাথে যোগ হয়েছে বন্যা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভোটের দিন তারিখ ঘোষণা করে কমিশন। এতে শুরু থেকেই প্রতিবাদ করে আসছে বিএনপি। তাদের দাবী দুর্যোগকালীন সময়ে তারা নির্বাচন না করার জন্য।
বিশেষ করে বগুড়ার-১ সোনাতলা- সারিয়াকান্দি আসনের বেশির এলাকা এখন পানির নিচে। এসব এলাকার ভোটাররা জীবনের ঝুকি নিয়ে বন্যার সাথে পাল্লা লড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে না। তাছাড়া সারিয়াকান্দির প্রত্যন্ত চরগুলোতে যে সব কেন্দ্র আছে সেগুলোও পানির নিচে। বিকল্প কেন্দ্রগুলোতে যেতেও বাঁধা হয়ে আছে বন্যা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো: সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোশারফ হোসেনসহ স্থানীয় বিএনপি বরাবরেই এই নির্বাচন পেছানোর দাবী জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের সেই দাবীগুলোকে আমলে নেই নি নির্বাচন কমিশন। কমিশন নির্বাচনে অটল। ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী কালই হচ্ছে নির্বাচন।
গত ১১ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বগুড়ায় নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য এসেছিলেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন সাংবিধানিক কারণেই করোনার মাঝেও উপ-নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যদি পিছিয়ে দিতে পারতাম তাহলে সুবিধা হতো। ভাল হতো। কিন্তু কোন সুযোগ নেই। একেবারেই শেষ সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি। যুদ্ধ হোক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন করতে হবে। সেরকম একটা বাধ্যবাধকতামূলক পরিস্থিতিতে আমরা আছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি আরো বলেন, ভোট দিতে এসে যদি কোন ভোটার জীবনের ঝুকিতে পড়েন সেই দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না।
এদিকে বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির নির্বাচন পেছানোর দাবীতে মাঠ ছেড়েছেন আগেই। তিনি বলেন, যে নির্বাচনের মানুষের আগ্রহ নেই সেই নির্বাচন বিএনপি করবে না। আগে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা তারপর ভোট। তিনি আরো বলেন, আমরা জোরালো ভাবে নির্বাচন পেছানোর দাবী করেছি এবং সেই দাবী না মানলে এই তামাশার নির্বাচন আমরা করবো না। এছাড়াও বগুড়া-১ আসনে ভোটারশূন্য ভোটকেন্দ্রে জোর করে ব্যালট বাক্স ভরানোর আশঙ্কাও করেছেন তিনি।
তবে বিএনপি মাঠে না থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা গোটা নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। অন্য প্রার্থীরাও গণসংযোগের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন। এসব প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মীদের বহরে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ফলে সমালোচানর ঝড়ও বয়ে যাচ্ছে এনিয়ে।