অস্ত্র কারবারে প্রতারক শাহেদের ২৫ সদস্যের গ্যাং
বহুরূপী প্রতারক রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদের আরো অপকর্ম প্রকাশ্যে আসছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার রয়েছে ২৫ সদস্যের গ্যাং। রয়েছে অস্ত্রের ভাণ্ডার। প্রতারণার সকল কৌশলই ছিল তার আয়ত্তে। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, টর্চার সেলে ভয় দেখানো ও চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহার হতো এসব অস্ত্র। যেখানেই যেতেন সঙ্গে থাকতো অস্ত্র। যার সবই অবৈধ। আর তার অস্ত্র ভাণ্ডারের তথ্য এখন র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
তারা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানে গ্রে’প্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদের অস্ত্র ভাণ্ডারের তথ্য দিয়েছে। শাহেদ তার বাহিনীর ২৫ সদস্যের কাছে এসব অস্ত্র বিতরণ করেছেন। এ বাহিনীকে যেখানে যেতে বলতো তারা সেখানেই যেতো। অপকর্ম করতো।
গ্রে’প্তারকৃতদের কাছ থেকে শাহেদের অস্ত্র সংগ্রহের করিডোর ও বার্ষিক এবং মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেয়াসহ নানা কাজে ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। হাসপাতালে অভিযানের পর শাহেদের গ্যাং চক্র গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে। গত মঙ্গলবার রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। ভুয়া করোনা পরীক্ষার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখানে। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শাহেদের অবস্থান নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
তিনি নজরদারির মধ্যে রয়েছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শাহেদ যত বড় ক্ষমতাবানই হোন না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তাকে খোঁজা হচ্ছে, তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, অন্যথায় তাকে গ্রে’প্তার করা হবে। যে কোনো সময় সাহেদ গ্রেফতার হবেন। তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, এবং গ্যাং পার্টিকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য অবৈধ উপায়ে অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল শাহেদ। এতে অস্ত্র চোরাকারবারিদের সঙ্গে তার বড় লিয়াজোঁ তৈরি হয়েছিল।
প্রতারণা করতে গিয়ে কারও সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে তাদের অস্ত্রের ভয় দেখানো হতো। সূত্র জানায়, তার ভাণ্ডারে ৫টি একে-২২, ৩টি কাটা রাইফেল, ৩টি ছোট রিভলবার রয়েছে। অনেক সময় নিজেই তিনি রিভলবার বহন করতেন। সেসব অস্ত্রের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতা পরিচয় দেয়ায় তার গাড়ি কেউ তল্লাশি করার সাহস পেতো না। ওইসব অস্ত্র সিলেটের কানাইঘাট ও বেনাপোল সীমান্ত থেকে অস্ত্র চোরাকারবারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে শাহেদ। সে নিজেও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে বলে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছেন।
সূত্র জানায়, তার অস্ত্র ভাণ্ডারের বড় নিয়ন্ত্রক ছিল সাব্বির। সাব্বির উত্তরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামধারী নেতা। তার কোনো পদ নেই। তার ব্যাপারে উত্তরা এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বিরক্ত। তার নামে পুলিশের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। তাকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাব্বির মূলত এইসব অস্ত্র নিযন্ত্রণ করতো। সূত্র জানায়, টঙ্গী এলাকায় আরিফ হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শাহেদের পরিচয় হয়। এই আরিফ অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত।