প্রতারণার আরেক নাম ডা. সাবরিনা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীতেও থেমে নেই প্রতারকরা। করোনার ভুয়া টেস্ট রিপোর্টসহ নানা অভিযোগ বন্ধ করা হয় ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাই। আর এবার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামীর নামে।
জেকেজি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়েই উঠে আসে এই দুই ব্যক্তির নাম। ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও জেকেজির চেয়ারম্যান। তার স্বামীর নাম আরিফ চৌধুরী।
ওই তদন্তের তথ্য মতে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনার টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করেছে। একটি ল্যাপটপ থেকে গুলশানে তাদের অফিসের ১৫ তলার ফ্লোর থেকে এই মনগড়া করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করে হাজার হাজার মানুষের মেইলে পাঠায় তারা।
জেকেজি’র কার্যালয় থেকে জব্দ ল্যাপটপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করোনা টেস্ট জালিয়াতির নানা তথ্য উঠে আসে। সেই তথ্য মতে, টেস্টের জন্য জনপ্রতি নেয়া হয় সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশি নাগরিকদের কাছে জনপ্রতি ১০০ ডলার। এ হিসাবে করোনার টেস্ট বাণিজ্য করে জেকেজি হাতিয়ে নিয়েছে সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও আরিফ চৌধুরীর দম্পতির জীবন যেন রূপকথার মতো। আরিফের চতুর্থ স্ত্রী সাবরিনা। আরিফের এক স্ত্রী থাকেন রাশিয়ায়, অন্য একজন লন্ডনে। আর আরেকজনের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তবে ছাড়াছাড়ির পরও সাবেক ওই স্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় আরিফের জন্য দেনদরবার করে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত সাবরিনার হাত ধরেই করোনার স্যাম্পল কালেকশনের কাজটি হাতিয়ে নেয় অখ্যাত প্রতিষ্ঠান জেকেজি। প্রথমে তিতুমীর কলেজে মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকা আর অনেক জেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করছিলেন তারা। স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্ট করলেও তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের নয়। তাদের দুজনের নামে থানায় মামলাও রয়েছে। এছাড়াও বিএমএর নেতার পরিচয় ভাঙিয়ে চলাফেরা করেন ডা. সাবরিনা।
এদিকে গত ২৪ জুন প্রতিষ্ঠানটির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আরিফসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দুই জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। অভিযানের সময় ল্যাপটপসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি ছিল জেকেজির। পরে ওই চুক্তি বাতিল করা হয়।