রহিম উদ্দিন এর উদ্যোগে হবিগঞ্জের বাহুবল হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই বিতরণ
হবিগঞ্জের বাহুবল সদর হাসপাতালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ এবং যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি মোঃ রহিম উদ্দিনের সৌজন্যে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে পি. পি.ই প্রদান করা হয়।
বুধবার (০১ জুলাই) হাসপাতালের পরিদর্শক ডাক্তার বাবুল কুমার দাস স্বাস্থ্য সুরক্ষার পিপিই গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাহুবল উপজেলা বি.এন.পি’র আহ্বায়ক জনাব মোঃ জাহিদুল ইসলাম জিতু, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জনাব হাজী সামসুল আলম এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এড: মিজানুর রহমান চৌধুরী৷
এসময় উপস্থিত থাকা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি রহিম উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছে মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ভঙুর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি বেপরোয়া রূপ লাভ করেছে। শুধুমাত্র একটি হাসপাতালের নাস্তা ও যাতায়াত বিল হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এ থেকে বুঝা যায় দুর্নীতির প্রচণ্ডতা। ভঙুর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পূনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতি উৎখাত করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে নতুন চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা ও পুরাতনগুলোকে সমৃদ্ধ করা।
করোনা টেস্টে ফি নির্ধারণ নিয়ে যুবদলের এ সভাপতি বলেন কত বড় গণবিরোধী গণশত্রু হতে পারে এই সরকার। একজন রিকশাওয়ালা, একজন ভ্যানওয়ালা, একজন মজুর, একজন কৃষি শ্রমিক সারাদিন কাজ করার পর হয়তো ১ শ’ থেকে ২ শ’ টাকা ইনকাম করতে পারে, তাও পারে না, কেউর ৬০/৭০ টাকা ইনকাম হয়। সে ২ শ’ টাকা দিয়ে করোনা টেস্ট করবে কী করে? আমরা করোনা টেস্টে ফি নির্ধারণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এছাড়াও ২০২০-২০২১ বাজেট পাশ হওয়া প্রসঙ্গে রহিম উদ্দিন বলেন অর্থমন্ত্রী জনাব আ.হ.ম মোস্তফা কামাল ১১ জুন জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট পেশ করেন। প্রস্তাবিত ওই বাজেটের ওপর আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কতিপয় প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অর্থনীতিবিদগণের পক্ষ থেকে বাজেটের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে জনগণের স্বার্থে কিছু বিষয় বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। ওই সব সুপারিশ ও প্রস্তাবনা বিবেচনায় না নিয়ে ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সরকারের সুবিধামতো একটি বাজেট জাতীয় সংসদে পাশ করানো হলো। এ বাজেট জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলে আসছেন। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি বাজেটে অবৈধভাবে টাকা উপার্জনকারী অর্থাৎ কালো টাকার মালিকদের টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে মূলত দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়। এ বাজেটের মাধ্যমে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
তিনি বলেন কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। আজ যে বাজেট পাশ করা হলো তাতে উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাসের কোনো কথা বলা হয়নি। বরং রাসায়নিক সারের গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে সংকটই আসুক, সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে। আমরা লক্ষ্য করছি করোনাভাইরাস, সুপার সাইক্লোন আমফান ও উত্তর বঙ্গে বন্যায় আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত দৃশ্যমান কোনো ভূমিকাই সরকার রাখতে পারেনি। আমরা মনে করি, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে যে বাজেট পাশ করা হলো, তা দেশ ও জাতির জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কার্যত এই বাজেট পাশের মাধ্যমে দল ও গোষ্ঠী বিশেষের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাই আমরা এবাজেটকে প্রত্যাখ্যান করছি।
পিপিই প্রদানকালে সরকার পাট কল বন্ধ করে দেয়া প্রসঙ্গে উপস্থিত থাকা নেতৃবৃন্দদের রহিম উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় খাতের সবগুলো পাটকল সরকার বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাটকল গুলোয় বর্তমানে স্থায়ী শ্রমিক আছেন ২৪ হাজার ৮৮৬ জন। এছাড়া তালিকাভুক্ত বদলি ও দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। অর্থাৎ ৫১ হাজার কর্মীর পরিবারের অন্তত আড়াই লক্ষ মানুষের জীবনে এক চরম বিপর্যয় তৈরি করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যখন করোনার ভয়ঙ্কর অভিঘাতের ফলে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়া দূরে থাকুক, সরকার বর্তমানে কর্মে নিযুক্ত মানুষকেও কর্মচ্যুত করছে।
পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার কারণ হিসাবে পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবের দেয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে এ নেতা আরও বলেন, পাটকল সচিব বলেছেন,‘গত ৪৮ বছরে সরকারকে এই পাট খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে।’ অথচ এক ওয়াট বিদ্যুৎ না কিনে গত ১০ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ বিরাট কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। পাট খাতে যে লোকসান হয় সেটার জন্য শ্রমিকরা কোনভাবেই দায়ী নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত আর সব খাতের মতো প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণেই এই শিল্পগুলোতে লোকসান হয়। সেই ব্যর্থতার মূল্য আজ দিতে হচ্ছে শ্রমিক ভাইদের।’
তিনি বলেন, এই করোনাকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে ৫০ হাজার শ্রমিককে কর্মহীন করা এবং লক্ষাধিক মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেয়া এই সরকারের চরম নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ। একদিকে ৮-১০ লাখ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছে, প্রায় ৩ কোটি লোক নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে এসেছে, তখন পাটকল শ্রমিক ও ওই অঞ্চলের মানুষদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।
যুবদলের এ নেতা আরও বলেন, লোকশানের প্রধান কারণ দুর্নীতি, কারখানাগুলো আধুনিকায়ন না করা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি না হওয়া। সেটার সমাধান না করে কারখানা বন্ধ না করা কোনো সমাধান নয়। সরকার কি আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি বন্ধ করতে পেরেছে? প্রতিটি নিয়োগে, প্রতিটি বদলিতে, প্রতিটি পদোন্নতিতে যে দুর্নীতি হয় তা কি বন্ধ করতে পেরেছে? তাহলে তো সরকাকেই বন্ধ করে দিতে হয়। সুতরাং দুর্নীতির দোহাই দিয়ে সব দায় শ্রমিকের ওপর চাপানো চলবে না।