হলে হলে অবৈধ শিক্ষার্থী উচ্ছেদ অভিযান চলবে: বুয়েট ভিসি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রভাব ভর্তি পরীক্ষায় পড়েনি। ৯০ ভাগ আবেদনকারী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
সোমবার বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
বুয়েটের চলমান সঙ্কট নিরসনে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। যে সমস্যা রয়েছে আমরা সেগুলো সমাধানে বেশ কয়েকটি কমিটি করেছি। আশা করি, দ্রুতই সঙ্কট নিরসন হবে।
বুয়েটের হলে হলে অবৈধ শিক্ষার্থী উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও এ সময় জানান উপাচার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেকোনো প্রয়োজনে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। আশা করি, তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। কারণ তাদের দাবির বিষয়ে আমরা একমত।’
এ সময় উপাচার্যের কাছে অভিভাবকরা আবরার হত্যার বিচার চান। জবাবে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে আমরা আন্তরিক। সরকারও বিচারের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই আশা করি, সুষ্ঠু বিচার হবে।’
ভর্তি পরীক্ষার কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। তাদের দাবি মানা না হলেও ভর্তি পরীক্ষা হতে দেয়া হবে না বলেও জানান আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নিলে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল করেন আন্দোলনকারীরা।
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
এদের মধ্যে ১৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।