করোনায় বিএনপির সহায়তা পেয়েছে অর্ধকোটি পরিবার

0

মহামারী করোনাভাইরাসের সঙ্কটে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ৫৫ দিনে দেশের অর্ধকোটিরও বেশি পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। করোনায় দলীয় ত্রাণকার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে গত ৪ মে গঠন করা হয় কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল। এরপরই কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ সংসদীয় আসনভিত্তিক নেতাদের ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

কেন্দ্রীয় দফতর সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের সর্বত্র ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা দেয়া হয়। জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গত ২০ মে পর্যন্ত ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬০টি পরিবারের মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ফলে সর্বমোট ২ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ জন উপকৃত হয়েছেন। ঈদের আগে গরিব মানুষের বাসাবাড়িতে ঈদ-উপহার ও নগদ অর্থও পৌঁছে দেয়া হয়।

বিএনপির পরিসংখ্যান মতে, গত ২০ মে পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, তাঁতী দলের নেতাকর্মীরা প্রায় ৫২ লাখ পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন। বিগত সময়ে ক্ষমতার ভাগীদার বা সুবিধাভোগী নয় এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি বড় অংশ এ দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তরুণ নেতারা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কেউবা ফান্ড গঠন করে সহায়তা দিচ্ছেন। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭১, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৬০, খুলনায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১০২, ঢাকায় ১৯ লাখ ৫০ হাজার ১০, ময়মনসিংহে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪১, ফরিদপুরে ৭১ হাজার ৯৩৫, বরিশালে ৬৮ হাজার ২৩৫, সিলেটে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৬৯, কুমিল্লা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৮, চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৭৯৩ পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয়া হয়। এ ছাড়া যুবদল সারা দেশে ২ লাখ ৩০ হাজার ৭০২টি পরিবারে, স্বেচ্ছাসেবক দল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩০, ছাত্রদল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬২, কৃষকদল ১৯ হাজার ১৬৫, মহিলা দল ১৫ হাজার ৫৩০, শ্রমিক দল ৫ হাজার ৭৭৫ টি, জাসাস ১২ হাজার ৩৭৫টি, তাঁতী দল ১০ হাজার ৩০০টি, মৎস্যজীবী দল ১৫ হাজার ৮৮৭টি, ওলামা দল ৫ হাজার ৬০টি পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। এর বাইরে ছাত্রদল ৩ লাখ ৫০ হাজার ২৩০টি মাস্ক, ২ লাখ ৭০ হাজার ৩২৫টি সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতায় দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল চলছে। বেসরকারি বা অন্যান্য সূত্রে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। সরকারি প্রেসনোটে প্রতিদিন যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল নেই। সরকারি ভাষ্য মানুষ বিশ^াস করে না। শুরু থেকেই লকডাউনের পরিবর্তে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনগণের সাথে তামাশা করা হয়েছে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার। এক দিকে দেশজুড়ে শোকার্ত মানুষের আহাজারি অন্য দিকে করোনার ত্রাণ চুরির মহোৎসব। দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সব শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে সবার মতামত নিয়ে একটি সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, ঈদ-উপহার ও নগদ অর্থ পৌঁছানো হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।

জানা গেছে, করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে। লিফলেট, মাস্ক-স্যানিটাইজার কিংবা ত্রাণসামগ্রী সবই বিতরণ করছেন রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে। ত্রাণ বিতরণে নজর কেড়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায়, বস্তিবাসী, দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। বাবার নামে গঠিত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও অর্থসহায়তা নিয়ে দিন-রাত ছুটছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। এ ছাড়াও রাজধানীতে নিয়মিতই ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালও। নেত্রকোনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা: আনোয়ারুল হক বলেন, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি প্রায় ১০ হাজার মানুষকে খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়েছেন। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, তিনি তার নির্বাচনী এলাকা মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে অসংখ্য মানুষকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছেন। ফেনী-৩ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি প্রায় ২ সহ¯্রাধিক মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন। খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় ৬ হাজার পরিবারে উপহার ও খাদ্যসামগ্রী, কাঁচা সবজি পাঠিয়েছেন। ময়মনসিংহ-৯ আসনে (নান্দাইল) বিগত সময়ের ক্ষমতাভোগী নেতারা যখন এই দুঃসময়ে নীরব তখন মালয়েশিয়া বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মামুন বিন আব্দুল মান্নান ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদউপহার তুলে দেন। লক্ষ্মীপুর সদর আসনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ১২ হাজার পরিবারে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বহু মানুষকে ত্রাণ দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রথম সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের অসহায়, দরিদ্র পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ৯ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছেন। এ ছাড়া ৫ হাজার মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা উপকরণ প্রদান করেছেন তিনি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com