কোটি টাকার চাল খেয়ে খাদ্য কর্মকর্তা হাওয়া

0

নীলফামারীর ডিমলায় ৯৩ লাখ টাকার চাল আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছেন সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) হিমাংশু কুমার রায়। এ ঘটনায় সাময়িক বরাখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মামলাটি করেন ডিমলা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জগদীশ চন্দ্র সরকার। হিমাংশু কুমার খাদ্য গুদামের চাবিসহ পলাতক থাকায় থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন অভি জানান, ২০১৯ সালের ১৪ জুন হিমাংশু কুমার রায় ডিমলা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। যোগদানের পরপরই বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম তদন্তে গত ২৪ মার্চ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় জেলা খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। গত সোমবার প্রতিবেদন জমা দেয় ওই তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে হিমাংশুর বিরুদ্ধে  গুদামের সরকারি ১৮৯ দশমিক ২৭০ মেট্রিক টন চাল এবং ১৩ হাজার ৪২৫টি খালি বস্তা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৯৩ লাখ টাকা।

এর আগে রংপুরের পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ি খাদ্যগুদামে কর্মরত ছিলেন হিমাংশু। সেখানেও নানা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এসব তথ্য জানিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন অভি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে গত সোমবার খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তদন্ত  কমিটি পুনরায় ডিমলা সরকারি খাদ্যগুদামে গেলে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায় তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান। পরে তার বিরুদ্ধে ডিমলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’

নীলফামারী খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, হিমাংশু কুমার রায় তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে চাল লোপাটের দায় স্বীকার করে আগামী ১৪ জুনের মধ্যে তা সমন্বয় করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।’

ডিমলা থানার ওসি মো. মফিজ উদ্দিন শেখ গতকাল বিকালে বলেন, ‘ডিমলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ৯৩ লাখ টাকা মূল্যের চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

বরগুনায় রাতের আঁধারে গুদাম থেকে চাল চুরি, খাদ্য কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ৭ : বরগুনায় সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে রাতের আঁধারে চাল চুরির অভিযোগে খাদ্য পরিদর্শকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার গভীর রাতে জেলা শহরের হাই স্কুল সড়কের বরগুনা সদর খাদ্য গুদাম এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় চাল চুরির অভিযোগে মামলা করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকির হোসেন তালুকদার।

গ্রেপ্তাররা হলেন খাদ্য পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন বিপ্লব, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের গাড়িচালক মাসুম বিল্লাহ, নিরাপত্তা প্রহরী আবদুর রহমান, গুদাম শ্রমিক শাহিন খান, ফোরকান মুসুল্লী, বিনয় দত্ত ও আবদুস সোবহান।

খাদ্য নিয়ন্ত্রকের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা বরগুনা সদর খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন বিপ্লবের নেতৃত্বে সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় গুদামে ঢুকে প্যাকেটকৃত বস্তা থেকে বোঙ্গা (লোহার পাইপ) ঢুকিয়ে চাল বের করে অন্য খালি বস্তায় ভরে চুরি করছিল। এ খবর পেয়ে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও বরগুনা থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আসামিদের আটক করে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে ২২ বস্তা চাল, একটি চার্জার লাইট, তিনটি লোহার হুক, দুটি বোঙ্গা, বস্তা সেলাইয়ের সুই ও রশি জব্দ করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ নিয়ে বরগুনা খাদ্য গুদামে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, খাদ্য গুদামে বিদ্যুতের সংযোগ থাকা সত্ত্বেও চার্জার লাইট জ্বালিয়ে গোপনে বস্তা থেকে চাল বের করে অন্য বস্তায় ভরা হচ্ছে। আমাদের দেখে আসামিরা সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে আমরা তাদের আটক করে নিয়ে আসি।’

সরকারি চাল চুরির অভিযোগে মামলার পর গ্রেপ্তার সাতজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা শাহজাহান হোসেন।

তবে গ্রেপ্তার গুদাম পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন বিপ্লবের বাবা নুরুল ইসলাম মৃধার দাবি, তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com