জাতীয় বাজেট ২০২০ ২০২১— বিএনপির ভাবনা

0

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র বাজেট ভাবনাঃ অর্থবছর ২০২০-২১

মঙ্গলবার, জুন ৯, ২০২০

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আসসালামু আলাইকুম।

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রকোপে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। কতদিন এ দুর্যোগ চলবে তাও অনিশ্চিত। জীবন ও জীবিকার টানাটানিতে জনজীবন ও অর্থনীতি দুটোই মহা সংকটে রয়েছে। এই পটভূমিকায় শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বলছেন করোনাকালের এবারের বাজেট গতানুগতিক বাজেট হবে না। করতে হবে বিশেষ বাজেট। এর মুখ্য উদ্দেশ্য হবে করোনার প্রভাব মোকাবিলার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা ও দুর্ভোগ উপশম করা। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা। এজন্য দরকার হবে সহায়ক নীতি সহায়তা। অনেকে মনে করেন, করোনার ভয়াবহতা না কমলে নতুন বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ৬ মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা। কারণ করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হবে না। আবার অনেকে মনে করেন, অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেট ব্যবস্থা থেকে সরে এসে ৩ বছরের মধ্য-মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

কিন্তু করোনা সংকটের মধ্যে ১১ জুন আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য একটি গতানুগতিক বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। পত্রপত্রিকার সূত্রে জানা যায় যে, বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৮.২%। সংশোধিত হার ৫% নির্ধারণের কথা শোনা যায়। যদিও ওগঋ বলছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি হবে ৩.৮%, বিশ্বব্যাংক বলছে ২-৩% এবং ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স বলছে ১.৬ শতাংশ (প্রথম আলো- ৮-৬-২০)।

আসন্ন বাজেটে ঘাটতির প্রস্তাব করা হচ্ছে জিডিপির ৬%। ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ১ লক্ষ ৭২ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা যা চলতি বছর ছিল ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। তন্মধ্যে এনবিআর সূত্রে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি, আর বাকি ৫৯ হাজার কোটি অন্যান্য খাত হতে। এনবিআর এর পক্ষে এতো বিরাট অংকের রাজস্ব আহরণ (প্রায় ৫০% প্রবৃদ্ধি) একেবারেই অসম্ভব। তাই এবারের বাজেট হতে যাচ্ছে কাল্পনিক কাগুজে বাজেট।

শোনা যায় আগামী অর্থ বছরে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২%। আর গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৪ %। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্পষ্টতই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। জগএ সেক্টরে ক্রয়াদেশ অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। রাজস্ব আাদায়ও বড় ধরনের অনিশ্চিত। প্রবাসী আয়ও কমে যাবে। স্বাভাবিকভাবে অভ্যন্তরীণ ভোগের চাহিদাও কমবে। তাহলে এতো প্রবৃদ্ধি হবে কিভাবে ? লক্ষ্য যদি ভুল হয় তাহলে সব খাতেই ভুল হতে বাধ্য। সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোতেই গলদ রয়েছে।

বাজেটে নতুন অউচ ধরা হচ্ছে ২ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে, বাকি টাকা বৈদেশিক ঋণ। চলতি অর্থ বছরে অউচ ছিল ২ লক্ষ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা যার বহুলাংশই অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। আসছে বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে কর্মচারীদের বেতন ভাতা, অবসর ভাতা, ভর্তুকি, প্রণোদনা, সুদ পরিশোধ এই তিন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা যা চলতি অর্থবছরে ছিল ২ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে তা মাত্র ৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। সরকারের জ¦ালানি ভর্তুকি বাবত ৫ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে। রপ্তানি কম হওয়ায় রপ্তানি ভর্তুকি বাবত বাঁচবে ২০০০ কোটি। তাছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও আধা সরকারি সংস্থার উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে পাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা গতানুগতিক আয়ের অতিরিক্ত।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

করোনা সংকটের ফলে জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য খাতে উৎপাদন নাই বললেই চলে। বাজারে চাহিদা কম। রপ্তানিমুখী শিল্পেও পরিস্থিতি একই। গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, অর্ধেকেরও বেশি কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেই যে চাহিদা লাফিয়ে বাড়বে, সে আশাও করা যায় না। থাকবে নগদ টাকার সংকট। এহেন পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খরমযঃ ঈধংঃষব চধৎঃহবৎং ও সেবা ঢণত পরিচালিত এক সমীক্ষায় তথ্য উঠে এসেছে যে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিতে ৫২ শতাংশ মাঝারি প্রতিষ্ঠান (ঝগঊ) পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় পরিস্থিতি যেহেতু ভাল থাকার আশা ক্ষীণ, সেহেতু মানুষ জরুরি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে দেবে। হাতে যা কিছু সঞ্চয় আছে তাও ধরে রাখতে চাইবে। শিল্প খাতে উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস পাবে। ছোট ও মাঝারি খাতের অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা বেশি। রপ্তানি খাতেও একই অবস্থা বিরাজ করবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ দারুনভাবে কমে যাবে। বিনিয়োগ পরিস্থিতি তো করোনার আগ থেকেই ভাল ছিল না। জিডিপি’র অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার অনেক বছর ধরেই ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে এলো করোনার হানা। করোনার কারণে সাধারণ ছুটিকালে অনানুষ্ঠানিক খাতে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। কোথাও লে অফ হয়েছে। অনেকেই বেতন, মজুরি, উৎসব ভাতা পাননি, অনেকে আংশিক পেয়েছেন। কোটি কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। তাই চাহিদাও কম। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি ছিল আলোচনার বড় বিষয়। ১৪ লক্ষেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়ে দেশে ফিরেছেন বা আসার পথে রয়েছেন। দারিদ্র বেড়ে ৩৫% এ উঠেছে, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪.৩৩%। পাশাপাশি আয় ও ভোগের বৈষম্য বেড়েছে।

কর্মসংস্থান সুরক্ষায় অর্থপূর্ণ সরকারি পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক। ছাঁটাই না করার শর্তে প্রণোদনা, অনুদান, কর্পোরেট কর ছাড় ইত্যাদি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সিঙ্গাপুরে ৭০ শতাংশ বেতন কর্মীর ব্যাংক হিসাবে সরকার দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্মী ছাঁটাই না করার শর্তে। আমাদের দেশেও শ্রমিক স্বার্থে এমন ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক যা বরঞ্চ ব্যাংক একাউন্টে পরিশোধ করতে হবে। তদুপরি সরকারি উদ্যোগে নানামুখী কর্মসৃজন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

এদিকে করোনার পাশাপাশি আ¤পানের নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে অর্থনীতিতে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে উপকূলবর্তী বাঁধগুলো ভেঙ্গে গেছে। অনেক এলাকায় মানুষ এখনও জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। ফসল ও স¤পদের ক্ষতি হয়েছে অনেক। অথচ আসছে বাজেটে সরকার বরং পানি স¤পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ গত বছরের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা যায়।’

দিন এনে দিন খায়’ এ শ্রেণীর হতদরিদ্র মানুষ, নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের সংখ্যা ৩ কোটির মতো হবে বলে মনে করা হয়, এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। যাতে করে কর্মহীন ও ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা এই অসহায় মানুষগুলো বেঁচে থাকতে পারে, যাতে করে তারা নগদ অর্থ ব্যয় করে অর্থনৈতিক বাজারে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে পারে। তাদের হাতে Cash transfer করতে হবে। বাজারে জিনিষপত্রের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে যার সাথে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষি, প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবসা বাণিজ্য খাতে ব্যাংক ঋণ নয়, বরং বিশেষ সরকারি তহবিল থেকে সহজ শর্তে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের চিহ্নিত করে দলমত নির্বিশেষে সকলকে। এর ফলে আশা করা যায় অতি অল্প সময়ে এ সকল প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে, সার্বিক অর্থনীতিতে যার dividend দৃশ্যমান হবে। একইভাবে বিদেশ-ফেরৎ প্রবাসী ভাইদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য নামে মাত্র সুদে capital-aid সহ প্রশাসনিক সাপোর্ট দিতে হবে। কিন্তু মাঝারি শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিল্প খাতে যে ব্যাংক ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার, তার সিংহভাগই চলে যাবে বড় বড় ঋণ খেলাপিদের পেটে। আর প্রবাসীদের জন্য সরকার দিচ্ছে মাত্র ৫০০ কোটি টাকা, যা নিতান্তই অপ্রতুল। আমরা বলেছিলাম, প্রবাসী যারা ইতোমধ্যে দেশে এসে পড়েছে তাদেরকে ১০০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য এবং ভবিষ্যতে যারা ফেরৎ আসবে তাদেরসহ উৎসাহী প্রবাসীদের প্রত্যেককে সহজ শর্তে capital-aid প্রদানের জন্য। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে নগদ অর্থ trasnfer এর বরাদ্দের কোনো কার্যকরী প্রোগ্রামই এ পর্যন্ত সরকার গ্রহণ করেনি। আমরা আশা করি, আসছে বাজেটে সরকার হতদরিদ্র নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে অন্তত ৬ মাসের আপতকালীন cash transfer করার কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে এবং সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে তা বিতরণের ব্যবস্থা করবে।

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও শোচনীয় অবস্থা

আমাদের স্বাস্থ্য খাত চরম অবহেলিত। সারা বিশে^ যখন স্বাস্থ্য খাতে ক্রমাগত বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন আমাদের কমছে প্রতি বছর। মার্চে বলা হলো, করোনা মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত। অথচ প্রস্তুতির নমুনা তো জাতি দেখতেই পেল। করোনা আক্রান্ত সিলেটের একজন নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসককে ঢাকা আনার জন্য একটি ওঈট সরঞ্জাম সজ্জিত এম্বুলেন্স পাওয়া গেল না। একজন চিকিৎসক বিনা চিকিৎসায় ঝরে গেলেন। ১৬ কোটি মানুষের জন্য একটি আইসিইউ সজ্জিত এম্বুলেন্সও নেই আমাদের। সারা দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

তার ওপর যোগ হয়েছে দেশব্যাপী সার্বিক দুর্নীতির সাথে স্বাস্থ্য খাতের অপশাসন, দুঃশাসন, অব্যবস্থা, স্বচ্ছতার অভাব এবং পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতি। ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে কেনাকাটায় সাগরচুরি চলেছে। জনৈক হাসপাতাল পরিচালককে অপ্রয়োজনীয় চাহিদাপত্রে স্বাক্ষর না করায় অবসর গ্রহণের মাত্র কয়েকদিন আগে নজিরবিহীনভাবে শাস্তিস্বরূপ অন্যত্র বদলি করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তখনকার শীর্ষ কর্তৃপক্ষসহ অনেকেরই দুর্নীতির টাকায় নিউ ইয়র্কে ১৫০টির অধিক ফ্ল্যাটের মালিকানার খবর প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। তারা বহাল তবিয়তেই আছে। আশ্চর্য লাগে করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে নিম্নমানের পিপিই এবং মাস্ক সরবরাহ করায় অন্তত দুটো হাসপাতালের পরিচালক তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে সাথে সাথে তাদেরকে OSD করা হলো। অথচ পরে সরকারি তদন্তেই প্রমাণিত হয়েছে যে ঐ সব পিপিই ও মাস্ক ছিল নিম্ন মানের। অন্যদিকে এসব নিম্নমানের পিপিই ও মাস্ক পরে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এ দায়ভার কে নেবে ?

এদিকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ঋণে পিপিই, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, গগলসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা বর্তমান বাজারমূল্য থেকে ২ থেকে ৩ গুন বেশি। ৫শ টাকার গগলস ৫ হাজার টাকা, ২০০০ টাকার পিপিই ৪৭০০ টাকায় কেনার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা যায়। হাসপাতাল ও রূপপুর প্রকল্পে আজগুবি দামে পণ্য কেনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোটপাটের খবর দেশের জনগণ ভোলেনি। উন্নয়ন প্রকল্পে হরিলুট যেন আর থামছে না। সম্প্রতি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিটি লিফটের দাম ২ কোটি, প্রতিটি এসি ৫২ লক্ষ, প্রতিটি সিকিউরিটি গেইট লাইট ১২ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য জিনিসের দামও ধরা হয়েছে আকাশচুম্বী।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অসহায়ত্ব এখন চরম সীমানায় গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমানে অক্সিজেন সংকট চলছে সব হাসপাতালে। অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে প্রয়োজনীয় ঔষধের দামও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে অমানবিকভাবে। প্রশ্ন হলো সরকার নীরব কেন ? সরকারের ভূমিকা কি ? তদুপরি আগামী বাজেটে সরকার স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ মুহূর্তে মানুষের জীবন বাাঁচানোই সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়ার কথা। সরকার সেই স্বাস্থ্য খাতকেই অবমূল্যায়ন করছে। করোনা শনাক্তের তৃতীয় মাসে এসে উর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের কারণে অনিশ্চিত এক বিভীষিকাময় শঙ্কায় নিমজ্জিত হয়েছে জাতি। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনভাবেই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য খাতে এহেন ঝুঁকি থাকলে অর্থনীতির স্বস্তির কোন অবকাশ নেই।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আমরা মনে করি ৩ বছর মেয়াদী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামোয় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান সংকোচন রোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে, আয় সংকোচন রোধ করতে হবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

এই সংকটে মানুষের সার্বজনীন মৌলিক প্রয়োজনীয়তা যেমন – খাদ্য, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি প্রদানে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ও মুদ্রানীতি সহজ করাসহ কিছু নীতি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। “সামাজিক নিরাপত্তা জাল” নামে কিছু কর্মসূচী থাকলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। উপরন্তু এই কর্মসূচীটি উলঙ্গভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। জনসেবার খাতগুলোতে বরাদ্দ দিন দিন কমেছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের দুর্বলতাও করোনাকালে উন্মোচিত হয়েছে।

করোনার প্রভাবে ভোগ, চাহিদা, সরকারি ব্যয়, আমদানি ও রপ্তানির সূচক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে বাধ্য। কর্মহীন মানুষের আয় কমে যাওয়ায় কেনাকাটা কমে গেছে। সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে, ফলে বিনিয়োগও কমে যাবে। করোনার কারণে মার্চ মাসে প্রবাসী আয় ১২ শতাংশ কমেছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে এভাবে আয় কমে যাওয়ায় ভোগ-ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর প্রভাব প্রকটভাবে দেখা দেবে। আমাদের দেশে ব্যক্তিখাতের ভোগ-ব্যয় জিডিপি’র ৭০ শতাংশ। এদিকে ৬ মাসে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৬%। গণপরিবহন সংকটে কৃষকও পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলে পরবর্তী মৌসুমে এরা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন খুদে ব্যবসায়, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প, পর্যটন ও সেবা খাতসহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কার্যক্রম অচল হয়ে আছে।

সঞ্চয়হীন মানুষ ও মন্দাক্রান্ত সেক্টরকে সরকারকেই অর্থ প্রদান করতে হয়। যেহেতু মন্দাকালীন বিনিয়োগ, ভোগব্যয় ও রফতানি কমে যায়, সরকারকে সামষ্টিক চাহিদা বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকারি বিনিয়োগ বাড়ালে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে।

আমরা মনে করি আগামী বছর বাজেট প্রণয়নে –

আমরা বিগত ৪ এপ্রিল জরুরি ভিত্তিতে নগদ সহায়তা প্রদান, তৈরি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বিতরণ, ছিন্নমূলদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা, গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখি শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প, SME খাত, কৃষি খাত, খাদ্য সংগ্রহ এবং প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সহায়তা সাপোর্ট প্রদান, স্বাস্থ্য খাতের জরুরী উন্নয়ন ও অপ্রত্যাশিত খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে ৮৭ হাজার কোটি টাকার যে জরুরি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রস্তাব করেছিলাম সেটিকে আগামী বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।

এ সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

মন্দকালীন বিনিয়োগ, ভোগ ব্যয় ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামষ্টিক চাহিদা বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে সর্বাধিক জোর দিতে হবে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার্বজনীন মৌলিক প্রয়োজনীয় যেমন – স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষি ও গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ আয়-রোজগার বাড়াতে হবে। সহজ শর্তে ব্যপকভাবে কৃষি, পোল্ট্রি ও লাইভস্টক ঋণ প্রদান করতে হবে।

তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতে সহায়তা অব্যহত রাখতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।

বাজারে নগদ অর্থ-প্রবাহ নিশ্চিত করতে সক্রিয় মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে। মুদ্রানীতিকে স্থিতিশীলকরণ ও উন্নয়নমুখী – দুটো দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে তার ঐতিহ্যগত অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। প্রয়োজনে conventional পদ্ধতির বাইরে গিয়ে হলেও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানামুখী সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গত ৪ এপ্রিল বিএনপি প্রদত্ত অর্থনৈতিক প্যাকেজে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্য ও খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। জোর দিতে হবে দারিদ্র ও বৈষম্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর।

সঙ্কটকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ (supply chain) নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব বাজারের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। কর্মহীন, কর্মক্ষম বেকার, কর্মে নিয়োজিত দরিদ্র জনগণের প্রাতিষ্ঠানিক জীবন চক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে হলে তাদেরকে নগদ অর্থ সহায়তা সাপোর্ট দিয়ে সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। কেননা পুনরায় করোনার মতো আরেকটি ধাক্কা এলে মানুষ দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে নিপতিত হবে। আর বিশ্বে করোনা ইতিমধ্যেই পুনরায় ধাক্কা দেয়ার দৃষ্টান্ত গড়েছে যেমন – দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর।

সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রবর্তন, সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান ধরে রাখা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ক্ষেত্রগুলো বিশাল প্রণোদনার দাবিদার।

রাষ্ট্রের অর্থ জনগণেরই অর্থ। জনগণের অর্থ যাতে মুষ্টিমেয়’র হাতে না যায়। প্রণোদনা কেবল প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরকেই দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান জরুরি; কিন্তু কর্মসংস্থানই মূল নিয়ামক।

করোনাকালে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সারাদেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে restore করতে হবে; পুনর্গঠিত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে হবে। বিগত ৪ এপ্রিল বিএনপি ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। দীর্ঘ মেয়াদে এমন টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা institutionalized করতে হবে যাতে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনা জাতীয় মহামারীর মতো সংকট মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়, যারা যুদ্ধকালীন সময়ের মতো সর্বদা প্রস্তুত থাকবে একটি in built system এর আওতায়।

জীবন চক্র ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা

বাংলাদেশে বিশালসংখ্যক মানুষ এখন আয়-রোজগারহীন, ক্ষুধার্ত ও নিরাপত্তাহীন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ‘দিন আনে দিন খায়’ এ শ্রেণীর অনানুষ্ঠানিক খাতের খেটে খাওয়া মানুষদের সার্বজনীন সামাজিক কর্মসূচির আওতায় নগদ অর্থ সহায়তা (cash transfer), বেকার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশু প্রতিপালন ভাতা, পেনশন ভাতা, আবাসন সুবিধা, স্বাস্থ্য ভাতা দিতে হবে। শুরুতে জিডিপির ৬-৭ শতাংশ এ খাতে বরাদ্দ করতে হবে। এ খাতে গত অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল জিডিপির ১.০১% এবং বাজেটের ৫.৬% মাত্র।

স্বাস্থ্য খাত

নগণ্য বাজেট, চিকিৎসা উপকরণ স্বল্পতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা ও অপরিকল্পিত খরচসহ বিবিধ কারণে স্বাস্থ্যখাত হুমকির সম্মুখীন। স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো সার্বিকভাবে নির্ধারণ করে কৌশলের সাথে স্বাস্থ্য বাজেট বিন্যাস করতে হবে। করোনা সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বাজেট থেকে স্বাস্থ্য খাতের সু¯পষ্ট সংস্কার রুপরেখা দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের আলোকে প্রতিটি মানুষকে জাতীয় স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানের মাধ্যমে সর্বজনীন জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ভাতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকের জন্য পারিবারিক ডাক্তার, নার্স ও অবকাঠামোসহ সামগ্রিক ব্যয় নির্বাহে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপি’র vision 2030 তে ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ এবং Universal Healthcare এর নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জিডিপি’র ৫% ব্যয় এবং প্রত্যেকের জন্য নথিভুক্ত ডাক্তার (GP) রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে সরকারের স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ছিল জিডিপির ০.৮৮% যা বাজেটের ৪.৯% মাত্র। করোনা সংকটকালে আমাদের ভংগুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ চালচিত্র উন্মোচিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যেখানে স্বাস্থ্য খাতে বিশাল বরাদ্দ সমেত আমূল সংস্কার অনিবার্য বাস্তবতা, সেটাকে উপেক্ষা করে গতানুগতিক স্বাস্থ্য বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। দুই চারটি নতুন প্রকল্প নেয়া আর গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে সরকার। ১৬-১৭ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বছরে মাত্র ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৪৮ টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। আশ্চর্যের বিষয় হলো আসছে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের চেয়ে কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে (প্রথম আলো-৬/৬/২০)। স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানা যায়, যে অর্থ এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য সেক্টরের বিশেষায়িত হাসপাতাল, Vnetilator,Ambulance, Oxyzen cylinder প্রভৃতি অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য কাজে ব্যবহার করা যেতো।

শিক্ষা, প্রযুক্তি ও গবেষণা

চলমান উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, দক্ষতার বিকাশ ও সক্রিয় নাগরিকত্ব সৃষ্টিতে ব্যর্থ হচ্ছে। করোনা সংকটকালে ইন্টারনেটের ব্যবহারের গুরুত্ব আরো বেশি ¯পষ্ট হয়েছে। বিশেষকরে ভার্চুয়াল যোগাযোগ/ভিডিও কনফারেন্সিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির গুরুত্ব বিবেচনায় আইটি প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। কেননা এ খাত ভবিষ্যতে অন্যতম বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে। বিএনপির Vision 2030 তে প্রদর্শিত পথে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% অর্থ ব্যয় করতে হবে।

কৃষিতে উৎপাদন বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা

দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ এখনো কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যতই খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করা হোক না কেন বাংলাদেশ এখনও খাদ্য আমদানি-নির্ভর রয়ে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে হবে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য আয়ভিত্তিক একটি সুষম গণ-খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কৃষি ও খাদ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে জিডিপি ও বাজেটের কমপক্ষে যথাক্রমে ১.৫ ও ৫.৭৯ শতাংশ। যা চলতি বছরে ছিল যথাক্রমে ০.৯৭ ও ৫.৪ শতাংশ। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ০.৭৩ এবং বাজেটের ২.৮১ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ০.১২ শতাংশ এবং বাজেটের ০.৭ শতাংশ। বৈচিত্র্যকরণ, সবুজ শিল্পায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতি উজ্জীবন, সমন্বিত শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ইকুইটি ম্যাচিং তহবিল গঠন করা যেতে পারে। ক্ষুদ্র, মধ্যম ও নতুন উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিতে হবে।

সার্বিক কৃষি উন্নয়ন এবং টেকসই বাণিজ্যিক কৃষির রূপান্তরের লক্ষ্যে একটি কৃষি কমিশন গঠন করতে হবে।

কিভাবে অর্থের সংকুলান করতে হবে

অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ায় আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর কমবে, ফলে রাজস্ব আশানুরূপ হবে না। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য বিদেশি ঋণের ওপর জোর দিতে হবে। বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত সহনীয় কোঠায় সীমিত রাখতে হবে। মন্দায় ভোক্তার ব্যয় ও উৎপাদনের দুরবস্থায় মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা কম থাকলেও মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি কঠোর মনিটরিং করতে হবে ।

অর্থসংস্থানের জন্য নিম্ন রূপ সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে-

অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে, কিন্তু চাহিদা ও খরচ ব্যয় বিঘ্নিত না করার স্বার্থে কৃচ্ছতায় যাওয়া যাবে না। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ ভর্তুকি বাদ দিতে হবে, সরকারের অতিরিক্ত জনবল ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সহজে কর আদায়ের খাতগুলো বীঢ়ষড়ৎব করতে হবে। যেমন, এ দেশে কর্মরত অনিবন্ধিত প্রায় আড়াই লাখ বিদেশি নাগরিকের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ও আয়কর বাবদ প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার আয়কর আদায় করা যায়। ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল সক্রিয় করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে কর বৃদ্ধি করতে হবে। যে সকল দেশি কোম্পানিকে গোষ্ঠীতান্ত্রিক কর-সুবিধা দেওয়া হয়, তা পুননিরীক্ষণ করতে হবে।

দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বিদেশি অনুদান (Foreign grant) বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

কেবলমাত্র দীর্ঘমেয়াদি কম সুদের ও গ্রেস পিরিয়ডসম্পন্ন বিদেশি ঋণ (Foreign gran) নিতে হবে।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যাংক খাত থেকে আর ঋণ নেওয়া যাবে না। কারণ, ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যেই তারল্য সংকটে রয়েছে। ট্রেজারি বিল ও সঞ্চয়পত্রে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বাড়াবে। বাংলাদেশ ব্যাংককেই সরকারের অর্থের জোগান দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, সেই পরিমাণ তারল্যই বাজারে প্রবেশ করতে দিতে হবে, যে পরিমাণ অর্থ সংকোচন ক্ষতি পুষিয়ে দেবে বা মূল্যস্ফীতি সহনীয় অবস্থার মধ্যে রাখবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

যেকোনো সংকটের শুরুতে তারল্য প্রবাহ কমে যায়। অতএব, ব্যাংকগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানিকারকদের অর্থ বিলম্বে পরিশোধের পাশাপাশি প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রা আমদানি তহবিল গঠন করতে পারে। বাণিজ্যপ্রবাহে বিঘœতা এড়াতে বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা অদলবদল বা কারেন্সি সোয়াপ, বার্টার ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ এবং পুঁজির বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে বা তারল্য জোগানের মাধ্যমে এ মহাসংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। প্রয়োজন সক্রিয় রাজস্ব নীতির।

ব্যাংকিং খাত, ঋণ খেলাপি ও সুশাসনের অভাব

দেখা গেছে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা তুলনামূলক কম খেলাপি। যারা বড় অংকের ঋণ নেয় এরাই বড় খেলাপি। অনেকেই ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে। আজকাল এরা শাসনব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করে। এই ধনিক শ্রেণী যখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অযাচিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা করার ক্ষমতা অর্জন করে তখনই রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি গ্রুপের মালিকদের হাতে একটি ব্যাংকের এমডি অপদস্থ হয় মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অন্যায়ভাবে তাকে নাকি প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। থানায় মামলাও হয়েছে। এরপরও অভিযুক্তদের বিশেষ ব্যবস্থায় রোগী সাজিয়ে এয়ার এম্বুলেন্সে করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র যখন অপরাধীকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে, সে রাষ্ট্র অবশ্যই অকার্যকর রাষ্ট্র। এদের দ্বারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয় বলেই খুনের দায়ে দ-িত ব্যক্তি ক্ষমা পেয়ে আবারো খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়। মানবিক কারণে ক্ষমা, আর রাজনৈতিক কারণে ক্ষমা এক নয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ যখন ভাবতে শুরু করে সে ন্যায়বিচার পাবে না তখনই রাষ্ট্র ভেঙে পড়ার সূচনা হয়। শাসন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা উঠে গেছে। “১০ বছরে ধনী বাড়ার হারে শীর্ষে বাংলাদেশ”- এ সংবাদ সবাই জানেন। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান wealth tax এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত এক দশকে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে- এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। এসব ধনীদের মধ্যে সর্বনিম্ন ধনীর সম্পদের পরিমাণ ৫০ লক্ষ ডলারেরও বেশি। কিভাবে বাংলাদেশ ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারে শীর্ষে উঠে তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয়না।

পোশাক শিল্প শ্রমিক ছাঁটাই

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে যে সম্প্রতি পোশাক শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ সভাপতি। ৫৫% সক্ষমতায় কারখানা চালিয়ে শতভাগ কর্মী রাখা উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়- বিজিএমই সভাপতি এমনটিই বললেন। যদিও পরে দাবী করা হয়েছে যে, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা নয়, ছাঁটাই পরিস্থিতির সম্ভাবনার কারণে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন তিনি। অথচ এই মহা সংকটকালে শ্রমিকরা যাতে কর্মহীন হয়ে না পড়ে সে জন্যই তো ৫০০০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা অর্থ নিয়েছে মালিকেরা। প্রনোদনাও নেবেন, ছাঁটাইও করবেন, এ দুটো একসাথে চলতে পারে না। মোদ্দা কথা, এই সংকট চলাকালে শ্রমিক ছাঁটাই হবে অমানবিক ভুল সিদ্ধান্ত।

প্রবাসীদের সাহায্য প্যাকেজ

সরকার ওয়েজ আর্নার্স ফা-, অর্থাৎ প্রবাসীদের সঞ্চিত অর্থ থেকে ২০০ কোটি টাকা নিয়ে মাত্র ৭০০ কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ৪% সুদে। সহজ শর্তে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়ার সুযোগ পূর্ব হতেই বিদ্যমান। বাস্তবে সরকার কৈ এর তেলে কৈ ভাজার চেষ্টা করল মাত্র।

ভর্তুকি ও দুর্নীতি

২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ৪৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানা যায়। বলা হচ্ছে করোনা মোকাবিলায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য এ ভর্তুকির বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও এলএনজি খাতে ভর্তুকি দেয়া হবে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে দিতে হবে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমনকি শুধু চুক্তির শর্ত প্রতিপালনের জন্য কোনোরূপ বিদ্যুৎ না কিনেও বেসরকারি খাতের রেন্টাল পাওয়ার কোম্পানীগুলোকে প্রতি বছর ৪ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। চুক্তি করার সময়ই এ শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যাতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও সহজে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা মারা যায়। আর এ জন্য যারা দায়ী তাদেরকে আইন করে impunity দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর ৪ হাজার কোটি টাকা করে ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা কেবল এ খাতেই দুর্নীতি করা হয়েছে। এবারের ভর্তুকির বরাদ্দে সে টাকাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অথচ দিনমজুর শ্রেণী হতদরিদ্রদের জন্য নগদ সহায়তা প্রদান ছিল অত্যাবশ্যক, বিশে^র অন্যান্য দেশে তারা সকল নাগরিকের জন্যই যা করেছে। নগদ অর্থ সহায়তা না দিয়ে স্বল্পমূল্যে চাল বিক্রয় করে তো কর্মহীন অসহায় হতদরিদ্রদের পেটে ভাত দেয়া যাবে না। অধিকাংশেরই তো চাল কেনার সামর্থ্যই নাই। নগদ অর্থ সহায়তা না দিয়ে চাল বিতরণের এ সুযোগকে কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিগত আশীর্বাদ হিসেবে নিয়ে কিভাবে ত্রাণের চাল লুট করেছে তা ইতোমধ্যে আপনারা জেনেছেন। এই ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটে নগদ অর্থ সহায়তার পরিবর্তে ত্রাণের নামে পুনরায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা করে দিয়ে দুর্নীতির অপার সুযোগ সৃষ্টি করা হলো।

করোনা ভাইরাস কাহারো কাহারো জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে” (প্রথম আলো, ১৮-০৫-২০)। অনেকে এটাকে কাঁচা টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। OMS কার্ডের তালিকায় আওয়ামী লীগের ধনীদের নাম অন্তর্র্ভুক্ত হয়েছে। ৫০ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জনপ্রতি ২৫০০ টাকা করে ঈদ উপহার দেয়ার কথা বলে যে সামান্য টাকা দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার নিতে ৪টি মোবাইল নাম্বারে ৩০৬ ব্যক্তির নাম’ শিরোনামে সংবাদ বেরিয়েছে। আবার সরকার ঘোষিত ব্যাংক ঋণ প্যাকেজগুলোর ক্ষেত্রেও আছে নানা ছিদ্র। বলা হয়েছিল, ঋণ খেলাপিরা কোনো প্রণোদনা সুবিধা পাবেন না। কিন্তু ১১ মে তারিখে জানা গেছে, শিল্প খাতের ঋণ প্যাকেজ থেকে ঋণ খেলাপিদের ঋণ প্রদানে যে বিধিনিষেধ ছিল তা তুলে নেয়া হয়েছে (বিডি নিউজ ২৪, ১১ মে)। একজন অর্থনীতিবিদের মতে ”ঋণ খেলাপিরাই তো প্রণোদনার সব অর্থ খেয়ে ফেলবে। অন্যরা বা ভালো উদ্যোক্তরা কিছুই পাবে না। এতে ব্যাংকগুলো আরো সংকটে পড়বে যা তাদের জন্য অশনি সংকেত” (বিডি নিউজ ২৪, ১১ মে)। করোনার আগে সরকার ও সরকার দলীয় লোকের নানাবিধ অনিয়ম, বিদেশে অর্থ পাচার, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারী, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মেগা প্রকল্পের মেগা চুরি, বিনা কারণে অযৌক্তিকভাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ আত্মসাৎ, বিদ্যুৎ না কিনেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার লুট ইত্যাদি সহ নজিরবিহীন দুর্নীতির কথা মানুষ ভোলেনি।

কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সবকিছুর মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তনের (new order) আভাস দিচ্ছে। আমূল পরিবর্তন না করলে অর্থনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থবির হয়ে যাবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের আঘাত আসবে। এ পরিবর্তন কিভাবে ঘটবে তা নির্ভর করবে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের স¤পর্কের ওপর। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছে সরকার কতটুকু জবাবদিহি তার ওপর। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে কিভাবে দেশ লাভবান হবে, তা অবশ্যই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ওপর নির্ভর করবে। এ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তখনই কাজ করে যখন দেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরাজমান থাকে যা আমাদের দেশে বর্তমানে চরমভাবে অনুপস্থিত। বর্তমান আওয়ামী সরকারের জনগণের কাছে কোন জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটের তোয়াক্কা করে না। একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে সরকারের কোন বৈধতা নেই। তারপরও এই মহা সংকটের সময় বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রয়াসের আহ্বান জানিয়েছিলাম। সরকার তা গ্রাহ্য না করে পুরো জাতিকে আজ চরম ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। করোনা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থতা এবং এর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিণতির দায় বর্তমান আওয়ামী সরকারকেই বহন করতে হবে।

আল্লাহ হাফেজ

বাংলাদেশ

জিন্দাবাদ

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com