আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন

0

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিমে সব ধরনের সুদ নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা আমাদের কল্যাণের জন্যই করা হয়েছে।

আরবি ‘রিবা’ শব্দ দ্বারা সুদ বুঝানো হয়েছে। রিবা শব্দের অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি, বাড়তি, অতিরিক্ত, উদ্বৃত্ত। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সুদ বলে। সুদ সমাজের এক চরম ব্যাধি। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা সুদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন।

সুদের ভয়াল থাবায় দরিদ্র মানুষ আরও দারিদ্র্যের চরম সীমায় নেমে যায়। ফলে সমাজে চলে আসে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অসমতা। সুদের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে আল্লাহ বলেন-
‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের ময়দানে দাঁড়াবে, যেভাবে দাঁড়ায় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা/বেচা-কেনা) তো সুদের মতোই! অথচ আল্লাহ তাআলা ব্যবসা/বেচা-কেনাকে বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোজখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

সুদ মারাত্মক অপরাধ। ইসলামের বিধানের লঙ্ঘন। সুদের কার্যক্রম পরিহার না করাই হলো ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সব বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৮-২৭৯)

– ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩০)

শুধু সুদ খাওয়াই মারাত্মক অপরাধ নয়। বরং যারা এর সঙ্গে জড়িত তারাও ভয়বাহ শাস্তির সম্মুখীন হবে। তারা হবে অভিশপ্ত। সুদের গোনাহের ব্যাপারেও রয়েছে নির্দেশনা। হাদিসে এসেছে-
– হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদ গ্রহীতা, দাতা ও সুদি কারবারের লেখক এবং সুদি লেনদেনের সাক্ষী সবার ওপর লানত করেছেন।’ (মুসলিম)

– হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ ইবনে মাজাহতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুদের গোনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে, তার মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে আপন মাকে বিয়ে (মায়ের সঙ্গে জিনা) করার শামিল। (নাউজুবিল্লাহ)

সুদের শাস্তি
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মেরাজের রাতে আমি এমন একটি দল অতিক্রম করেছি যাদের পেট ঘরের মত (বড়)। ভিতরে অনেক সাপ। যা পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি বললাম, হে জিবরিল! এরা কারা? তিনি উত্তর দিলেন, এরা আপনার উম্মতের সুদখোর লোক।’ (ইবনে মাজাহ)

একটু ভেবে দেখি, সুদ খাওয়া বা দেয়া যেখানে আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করার শামিল। সেক্ষেত্রে কেউ কি এমন থাকার কথা যিনি আল্লাহর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন? অবশ্যই না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগে সুদ মহামারি আকার ধারণ করেছে। সুদের এই ব্যাধি থেকে আমাদেরকে মুক্ত হতে হবে। আমরা যদি পবিত্র রিজিক গ্রহণ করি। তবে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের রিজিকে প্রভূত বরকত দেবেন। তাই আসুন, সুদের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করি।

আল্লাহ তাআলা গোটা মানবজাতীকে সুদ মুক্ত জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। সুদ নামক অর্থনৈতিক মহামারি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com