যুবলীগ নেতা খালেদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ৮ দপ্তরের টেন্ডার

0

ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রেল ভবনসহ আট সরকারি দপ্তরের টেন্ডার একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করত বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সাড়ে ৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব দপ্তরের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজের টেন্ডার খালেদের মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস লিমিটেড, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রোপার্টিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

অবশিষ্ট প্রকল্পের কাজ পেতে ঠিকাদারদের ২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হারে খালেদকে চাঁদা দিতে হতো। বিভিন্ন সময় খালেদ হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে সাড়ে আট কোটি টাকা পাঠিয়েছে- এমন অকাট্য প্রমাণও পাওয়া গেছে। এমনকি সিঙ্গাপুরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে সে দেশে অর্থপাচার করছিল। তার কাছ থেকে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম ভিসাও জব্দ করা হয়। এ সব অভিযোগে গত রবিবার রাজধানীর মতিঝিল থানায় খালেদ ও তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে সিআইডি মামলা করেছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, দীর্ঘ তদন্তে অর্থপাচারের বিষয়ে অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই খালেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, রাজধানীর মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাছের বাজার, কোরবানির পশুর হাট, সিএনজি স্টেশন, গণপরিবহন থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেছে খালেদ। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ ও বিক্রি করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের তথ্যও পাওয়া গেছে।

মতিঝিলের ‘ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব’-এ অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমেও সে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে। তার মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁঁইয়া ডেভেলপারস লিমিটেড, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রোপার্টিজ নামে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস থেকে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি পরিচালনা করা হতো। এসব অবৈধ অর্থের একটি অংশ খালেদ তার নিজ নামে ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবগুলোয় লেনদেন করত। উত্তর শাহজাহানপুরে একটি, গুলশান এবং মোহাম্মদপুরে তার তিনটি ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার নামে একটি প্রাডো, একটি নোহা ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। খালেদ তার অবৈধ আয়ের একটি অংশ আইয়ুব রহমান নামে এক ব্যক্তির সহায়তায় মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছে।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, গত সেপ্টেম্বরে গুলশান থানায় র‌্যাবের দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খালেদের মালয়েশিয়ার দুটি, সিঙ্গাপুরের একটি এবং থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংকের এটিএম ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।

এদিকে খালেদের কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের মালয়েশিয়ার ভিসায় (ভিসা নং পিই-০৫১১১৬৪, ইস্যুর তারিখ : ৪ মে ২০১৮ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ : ৩ মে ২০২১) ভিসাটিতে (গণঝ গণ ২ ।ঙগঊ) লেখা রয়েছে যা ‘সেকেন্ড হোম ভিসা’ নামে অধিক পরিচিত। এই সেকেন্ড হোম ভিসার পূর্বশর্ত হিসেবে মালয়েশিয়ায় এফডিআর করতে হয়।

সিঙ্গাপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে অর্থপাচারের বিষয়ে সিআইডি জানায়, খালেদ সিঙ্গাপুরেও অর্পণ ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের নামে (রেজিস্ট্রেশন নং- ২০১৭৩০২৭৭) একটি ইলেক্টনিক্স পণ্য বিপণি প্রতিষ্ঠান খুলেছিল। ২০১৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের নামে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে একটি চলতি হিসাব খোলা হয়। তার এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার সিঙ্গাপুরের নাগরিক আবু ইউনুস এবং আইয়ুব রহমানের সহযোগিতায় হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যায়। এ ছাড়া আইয়ুব ও দীন মজুমদার নামে দুই ব্যক্তির সহায়তায় থাইল্যান্ডে অর্থপাচার করে খালেদ।

সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খালেদ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে সাড়ে ৮ কোটি টাকা পাচার করার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খালেদের পাসপোর্টে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও চীনের ভিসা রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার ৭০ বার ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ওই দিনই গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র আইন, অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগে গুলশান ও মতিঝিল থানায় চারটি মামলা করা হয়। মানিলন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলা তদন্ত করছে সিআইডি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com