প্রধানমন্ত্রী আপনি বের হবেন কবে? ডক্টর তুহিন মালিক
ধরুন। দেশে চরম খাদ্যের অভাব দেখা দিলো। অভুক্ত মানুষ সামনে যেটাই পাচ্ছে, সেটাই নির্বিচারে খেয়ে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছে। এখন যাদের কোনভাবেই খাদ্যের আর কোন সংস্থান নেই। তারা বাধ্য হয়ে নির্বিচারে ডাষ্টবিন থেকে পঁচা আর্বজনাযুক্ত খাবারই খাচ্ছে। তাদের আর কোন অপশন যে নাই। জীবাণুযুক্ত খাবারই তাদের কাছে বড় প্রায়োরিটি।
ধরুন। এই অবস্থায় একটি প্রতিষেধক আবিস্কার হলো। ডাষ্টবিনের পঁচা জীবানুযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা অর্জনের এই প্রতিষেধক। এখন অভুক্ত মানুষগুলো পঁচা জীবানুযুক্ত খাবার খেলেও কোন রোগ বা সংক্রামন হবে না। এভাবেই সম্প্রদায়ের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠলো।
ধরুন। এর একেবারে উল্টা চিত্রটি। যদি এদের বেশীরভাগ মানুষকে কোন প্রতিষেধক দেয়া না হয়। কিংবা এরকম কোন প্রতিষেধক এখনও আবিস্কৃত না হয়। তাহলে উল্টো রোগটি পুরো সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে খুব তাড়াতাড়ি। আর তাতে মারা যাবে সেই সম্প্রদায়ের বিশাল একটা অংশের মানুষ।
তাহলে, সবাই কি সংক্রামিত হবে? সবাই কি তাহলে মারা যাবে? উত্তর হচ্ছে না। তারাই মারা যাবে, যাদের কাছে ডাষ্টবিনের পঁচা জীবানুযুক্ত খাবার ছাড়া আর কোন খাবারের সংস্থান নাই। যারা শারীরিকভাবে দূর্বল। যারা রোগাক্রান্ত। বয়োবৃদ্ধ বা শিশু। তারাই হবে এই নিষ্ঠুরতার সর্বপ্রথম বলি।
আমরা যেমনটা লকডাউনকে ‘সাধারন ছুটি’ বলছি। তেমনি খোলাখুলিভাবে ‘হার্ড ইমিউনিটির’ কথা না বললেও, সবকিছু ‘সীমিত আকারে খুলে দেয়ার’ কথা বলছি। অর্থ্যাৎ ১৭ কোটি মানুষের বড় একটি অংশের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরির পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আমরা।
নিঃসন্দেহে এটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। আর স্বাভাবিক ভাবেই মহামারী পরিস্থিতিতে একটি দেশ যখন হার্ড ইমিউনিটির পথে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। তখন দেশটিতে এক লাফে করোনা সংক্রমণ ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাবে। আর সেই দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যদি সবাইকে চিকিৎসা দিতে অক্ষম, অসামর্থ বা অপারগ হয়। তাহলে অনেক মানুষেরই মৃত্যু ঘটবে।
আর এদের মধ্যে সবার আগে মারা যাবে খাবার ও জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া সাধারন মানুষগুলো। বয়স্ক, শিশু, রোগাক্রান্ত ও জীবনযুদ্ধে জর্জরিত অর্ধমৃত মানুষগুলো। আর এই মানুষগুলোর জন্য সেবারত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুহারও অনেক বেড়ে যাবে। এই জনগোষ্ঠীর জন্য মাঠে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ও সেনাসদস্যের মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘতর হবে। এদের খবরাখবর জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের মৃত্যুর মিছিলও বেড়ে যাবে।
তাহলে এই হার্ড ইমিউনিটির বলি হলো কারা? রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে মৃত্যুর মিছিলের সামনের কাতারে রেখে রাজকর্মচারিরা তখন টেলিভিশন পর্দায় এসে দায়িত্ব পালন করবে। নিজেকে বাসায় সুরক্ষিত রেখে জীবন ও জীবিকার সবক দিবে। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের সুরক্ষিত করে পুলিশ, সেনা, সরকারী কর্মচারী দিয়ে মাঠ নিয়ন্ত্রণ রাখবে। আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, অক্ষমতা এবং অব্যবস্থাপনাকে আড়াল করে দেশকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করে ব্যাংকগুলোকে খালি করবে। প্রকল্পের ব্যায় আরো কয়েক হাজার কোটি বাড়িয়ে দিবে। প্রাইভেট বিমানে বা এয়ার এম্বুলেন্সে ‘উন্নয়ন সহযোগীদের’ নিরাপদ জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। অথচ এদিকে তাদের নিজেদেরই কোন খবরই নেই যে, হার্ড ইমিউনিটি কীভাবে কাজ করবে, কত সময় নেবে, পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু, কত মানুষের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া যাবে এই হার্ড ইমিউনিটি?
সরকার যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে। তাহলে জনগণকে আশ্বস্ত করুন। জনগণের পাশে দাঁড়ান। মন্ত্রী, এমপি, সচিব ও দলের নেতাদের ব্যক্তিগত ও সরকারি গাড়ী ব্যবহার বন্ধ করে গণপরিবহনে যাতায়াত করুন। ৩৫০ এমপি প্রতিটি এলাকার জনগণের সাথে রাস্তায় থাকুন। যোগাযোগ মন্ত্রী গাবতলী ও সায়েদাবাদে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকুন। রেলমন্ত্রী থাকুন কমলাপুরে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকুন হাসপাতালগুলোর করোনা ইউনিটে। মেয়র, কাউন্সিল, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা নিজ নিজ
এলাকার বাসস্ট্যান্ড ও হাটবাজারে থাকুন। আর প্রধানমন্ত্রী, আপনি মমতা ব্যানার্জির মত হাটে মাঠে ঘাটে নেমে এসে হার্ড ইমিউনিটি সফল করুন।
ডক্টর তুহিন মালিক
আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ