লকডাউনে ডায়াবেটিস রোগীরা কী করবেন

0

টাইপ-২ ডায়াবেটিস লাইফস্টাইল ডিজিজ। অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা এই অসুখের অন্যতম কারণ। তাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই পারে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো অসুখকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। সুস্থ জীবনযাত্রার দুটি প্রধান শর্ত রয়েছে। ক) শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যালরি মেপে খাওয়া। খ) নিয়মিত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করা।

লকডাউন টানা চললে এই দু’টি ক্ষেত্রেই বড়সড় গোলযোগ দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া লকডাউন উঠলেও যে হুড়মুড় করে বাইরে বের হওয়া যাবে এমন নয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার।

ডায়েটের নিয়ম

লকডাউন হচ্ছে বলে আলাদা করে কোনো বিশেষ খাবার খাওয়ার দরকার নেই। দৈহিক উচ্চতা অনুযায়ী শারীরিক ওজন ঠিক থাকলে যেমন আগে ভাত, রুটি, সব্জি, মাছ (অর্থাৎ সুষম খাবার) খাচ্ছিলেন তেমনই খান। তাছাড়া, লকডাউনেও বাজার খোলা থাকছে। অতএব সব্জি এবং ফল পেতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সুতরাং ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ – ডিনারে সব্জি বাদ দেবেন না। প্রতিদিন একটি করে ফল খান। তবে খাদ্যগ্রহণের সঙ্গে দরকার নিয়মিত এক্সারসাইজ করা।

এক্সারসাইজ
যাদের বাড়িতে হাঁটার উপযোগী ছাদ বা উঠোন আছে তারা সেখানেই হাঁটুন । তা না হলে হাঁটার সমস্যা হতে পারে ঠিকই, তবে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ তো করাই যায়। বাড়িতে কোনো একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছোটবেলায় স্কুলে ফিজিক্যাল ট্রেনিং (পিটি) করার মতো এক্সারসাইজ করতে পারেন। এমনকী একজায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং করার মতো ডান-পা, বা-পা ওপরে তুলে-নামিয়েও এক্সারসাইজ করা যায়। ঘাম ঝরানো যায় ওঠ-বোসের মতো এক্সারসাইজ করেও। যাদের হাঁটুতে সমস্যা আছে তারা দেহের ওপরের অংশের ব্যায়াম করতে পারেন। মনে রাখবেন, সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট এক্সারসাইজ করলে ভালো হয়। সকাল এবং বিকেল— দু’বেলা সময় ভাগ করে এক্সারসাইজ করলেও চলবে।

আবার, এখন মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ পাওয়া যায়। সেই অ্যাপ-এর নির্দেশ অনুসরণ করেও অনেক ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যায়।

এখানেই শেষ নয়। এখন তো সব বাড়ির সব কাজই পরিবারের সদস্যদের করতে হচ্ছে। তাই ডায়াবেটিকরাও পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে ঘরের কাজ ভাগ করে নিতে পারেন। ঘরের কাজ করেও শরীর ফিট রাখা যায়।

মনে রাখবেন, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত এক্সারসাইজ করার অন্যতম সুফল হলো, খাবার খাওয়ার পর অনেকটা গ্লুকোজ পেশিতে প্রবেশ করতে পারে । লিভার থেকেও সুগার রক্তে কম মেশে । ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা চট করে বাড়তে পারে না।

মুশকিল হলো, লকডাউনে আরো বেশ কিছু সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে কোভিড ১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তা, ওষুধ নিয়ে সমস্যা, শারীরিক কিছু অসুখ ইত্যাদির কথা বলা যায়।

• দুশ্চিন্তা কমান : শুধু ডায়েট আর এক্সারসাইজ করলেই চলবে না। দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। দেখা গেছে, খুব দুশ্চিন্তা হলে শরীরে বেশ কিছু হরমোন বেরয় যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অতএব দুশ্চিন্তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান করুন। দুশ্চিন্তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন সহজে।

এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা আতঙ্ক জাগানো খবর ঘুরেই চলেছে। সারাদিন ধরেই শুধু করোনা সংক্রান্ত খবর দেখবেন না। দুশ্চিন্তা কমবে। শরীরচর্চা করলেও কিন্তু দুশ্চিন্তা কমে। কারণ এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরে এন্ডোর্ফিন নামে হর্মোন ক্ষরণ হয় যা মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

• ওষুধ ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা : রক্তে সুগারের মাত্রা যদি ঠিক থাকে, ওষুধ যেমন খাচ্ছিলেন তেমন খেয়ে যান। ওষুধ নিয়ে কোনোরকম প্রশ্ন থাকলে আপনার চিকিৎসককে ফোন করতে পারেন। তিনিই বলে দেবেন কী করতে হবে। তবে সুগার অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বা অন্য কোনোরকম নতুন শারীরিক সমস্যা হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে বা হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে ।

• সুগার টেস্ট : এখন সুগার মাপার যন্ত্র কিনতে পাওয়া যায়। সম্ভব হলে সেই যন্ত্রের সাহায্যে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে একটা কাগজে লিখে রাখুন। তবে যাদের বাড়িতে এই সুবিধা নেই, অথবা যাদের সুগার ছাড়া ডায়াবেটিস-এর অন্যান্য পরীক্ষা করতে হবে তাদের ল্যাবরেটরিতে গিয়েই টেস্ট করাতে হবে বাধ্য হয়ে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ রোধের নিয়মগুলো মেনে চলুন। অর্থাৎ স্যানিটাইজারের ঘনঘন ব্যবহার করুন, এবং অকারণে চোখে মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন । খুব প্রয়োজন ছাড়া অন্য যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।
শেষ কথা : মনে রাখবেন, কোভিড ১৯ দূর হবে একসময়। এখন ঘরে বসেই লড়াইটা করতে হবে। আর ততদিন ফিট থাকতেই হবে। তাই এই কদিন একটু ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন।

ডা. রানা ভট্টাচার্য

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com