হাঁপানির সমস্যা থাকলে যা খাবেন, যা খাবেন না
হাঁপানির রোগীদের খাবারের বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কিছু খাবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে পারে, আবার কিছু খাবার তা বাড়িয়ে তোলে। তাই হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং হাঁপানির লক্ষণগুলো হ্রাস করতে খাদ্যতালিকায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাজা খাবারের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে গত কয়েক দশক ধরে হাঁপানির ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের তাজা ফল এবং শাকসবজি জাতীয় সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে অ্যালার্জি হয় যা হাঁপানির লক্ষণগুলোর দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ জাতীয় খাদ্যগুলি হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
যা খাবেন:
আপেল: আপেলে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা অ্যাজমা উপশম করে। নিউট্রিশন জার্নালের একটি গবেষণা অনুসারে, আপেল হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ফুসফুসের ক্রিয়াকে উন্নত করে।
ফলমূল ও শাকসবজি: বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার ফলে হাঁপানির লক্ষণগুলি হ্রাস পেতে পারে কারণ এগুলিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কমলা, লাল, বাদামি, হলুদ ও সবুজ বর্ণের ফল এবং শাকসবজি খাওয়া কেবল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই শক্তিশালী করবে না, পাশাপাশি হাঁপানির আক্রমণকেও হ্রাস করবে।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সালমন, সার্ডিন, টুনা এবং কিছু উদ্ভিদ জাতীয় যেমন – ফ্ল্যাক্সিড এবং বাদাম আপনার ডায়েটের একটি অংশ হওয়া উচিত। আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরেটরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিনের মতে, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হাঁপানির তীব্রতা হ্রাস করে।
কলা: কলা খাওয়া হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন – দুধ, কমলালেবুর জুস, সালমন এবং ডিম, যা ৬-১৫ বছর বয়সী শিশুদের হাঁপানির সমস্যাকে কমাতে পারে। ভিটামিন ডি ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং রেসপিরেটরি ইনফেকশন হ্রাস করতে পরিচিত।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: আমেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১১-১৯ বছর বয়সী শিশুদের যাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কম তাদের ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই ডার্ক চকোলেট, কুমড়োর বীজ, সালমন এবং শাক জাতীয় খাবার খেয়ে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ বাড়ান।
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার: জার্নাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের শরীরে সুস্থ বাচ্চাদের তুলনায় ভিটামিন এ কম। তাই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাজর, ব্রোকলি, মিষ্টি আলু এবং শাক-সবজি খান। হাঁপানি হলে এই সমস্ত খাবার এড়ানো উচিত।
যা খাবেন না:
স্যালিসাইলেট: স্যালিসাইলেট জাতীয় খাবারগুলি হাঁপানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। স্যালিসাইলেট ঔষুধ এবং অন্যান্য পণ্যগুলিতেও পাওয়া যায়। এছাড়া, কফি, চা এবং অন্যান্য মশলায়ও পাওয়া যায়।
সালফাইটস: সালফাইট শুকনো ফল, ওয়াইন, চিংড়ি, আচারযুক্ত খাবার, লেবুর জুসে পাওয়া যায়। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
কৃত্রিম উপাদান: কৃত্রিম উপাদান, যেমন- ফুড ফ্লেবার, ফুড কালার, ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত এবং ফাস্ট ফুডগুলোতে পাওয়া যায়। হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই খাবারগুলো এড়ানো উচিত।
যেসব খাবার খেলে গ্যাস হয়: বাঁধাকপি, মটরশুটি, কার্বনেটেড পানীয়, রসুন, পেঁয়াজ এবং ভাজা খাবারের মতো খাবারগুলো গ্যাসের কারণ হয় যা ডায়াফ্রামের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তোলে।