পেশী ও গাঁটের ব্যথা কি করোনার লক্ষণ?
বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এই ক্ষুদ্র জীবাণুর কারণে থমকে গেছে আমাদের নিত্যদিনের পরিচিত জীবনযাপন। মানুষ সারাক্ষণ আতঙ্কে ভুগছে। বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকেরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজতে। এদিকে এটি নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে।
প্রথমদিকে কেবলমাত্র জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলেই চিন্তিত হয়ে পড়তেন সবাই, কিন্তু এবার তালিকায় যোগ হলো আরও একটি নতুন উপসর্গ, পেশী ও গাঁটের ব্যথা।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের নতুন উপসর্গের তালিকায় দেখা দিচ্ছে পেশী ও গাঁটে ব্যথার সমস্যা। তবে এই জাতীয় উপসর্গ সবার মধ্যে দেখা দিচ্ছে না। করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত মোট রোগীর মধ্যে মাত্র ১৪.৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে দাবী বিশেষজ্ঞদের।
করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রথমের দিকে এই উপসর্গকে এতটা গুরুত্ব দেয়া না হলেও বর্তমানে কিন্তু গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন চিকিৎসকেরা। গবেষকরা আরও দাবি করেছেন, করোনার ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক হবে তা নির্ভর করছে উপসর্গের উপরেই।
পেশী ও গাঁটে ব্যথার প্রকোপ যত বেশি হবে, ততই আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে ফুসফুসের অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম এর সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যথার তীব্রতা এতটাই থাকে, যা রোগীকে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে। তাই এসব রোগীকে আগে থেকে হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন ও অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণকে ঠেকানো হয়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, পেশীর ব্যথা যত মারাত্মক হবে, ফুসফুসের ক্ষতির আশঙ্কা তত বেশি হবে। তারা আরও জানাচ্ছেন, এই উপসর্গটি বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে অল্প বয়সীদের মধ্যেও এধরনের উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে।
কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেও, পেশী বা গাঁটে ব্যথা, পেশিতে টান মানেই কিন্তু করোনা দ্বারা আক্রান্ত নয়। কারণ, ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লেগে অল্প জ্বরের সঙ্গে পেশির ব্যথা দেখা দেয়, আবার একটানা ঘরবন্দি হয়ে বসে থাকা কিংবা সারারাত ফ্যানের নিচে বা এসিতে শুয়ে থাকলেও শরীরের এই জাতীয় ব্যথা দেখা দেয়। তবে ওষুধ ও ব্যায়াম করার পরেও যদি টানা তিনদিন একইরকম ব্যথা থাকে এবং ব্যথার চোটে অস্থির হয়ে যান তবে ভয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
করণীয়:
* ওষুধ খেয়ে, ব্যায়াম করার পরেও যদি কোনো সমাধান না মেলে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* উপসর্গ দেখার পর চিকিৎসক যদি করোনাভাইরাস টেস্টের কথা বলেন তবে দেরি না করে তা করিয়ে নিন।
* নিজেকে সাবধান রাখার জন্য এবং পরিবারকে সুস্থ রাখতে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে নিজে থেকেই বাড়ির লোকের থেকে দূরে থাকুন কিংবা হোম কোয়ারান্টিনে থাকুন।
* মাস্ক ব্যবহার করুন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
* করোনা টেস্টের রিপোর্ট যদি পজিটিভ আসে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতলে চিকিৎসা নিন।
* রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে চিকিৎসকের পরামর্শে যেমন ওষুধ খাচ্ছিলেন তেমন খেয়ে যান। তবে কিছুদিন বাড়ির সদস্যদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখুন।