আবরারকে হত্যার আগে-পরে মেসেঞ্জারে আসামিদের গোপন কথোপকথন

0

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে মারধর করে হল ছাড়া করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আবরার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েট শাখার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে গোপন কথোপকথনে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ছাত্রলীগের এই নেতারা মেসেঞ্জারে গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে কথা বলতেন। আবরার নিহত হওয়ার আগে-পরে তাঁরা সেখানে কথা বলেছেন।

আবরার হত্যায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের আলাপের এই বিবরণ থেকে তাঁদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আবরার ফাহাদকে হত্যা করার আগে-পরে আসামিদের (শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগ বা এসবিএইচএসএল) ফেসবুক মেসেঞ্জারে কী কথোপকথন হয়েছিল তা হুবহু তুলে ধরা হলো—

আসামি মনিরুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো

বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবীন (গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন) গত শনিবার দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে এই গ্রুপে লেখেন, ‘১৭-র আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলেছিলাম। তোদের তো দেখি কোনো বিকার নেই। শিবির চেক দিতে বলেছিলাম।’

মেহেদী হাসান এই কথা লেখার পর মনিরুজ্জামান (এই মামলায় গ্রেপ্তার) লেখেন, ‘ওকে ভাই।’

তখন মেহেদী আবার লেখেন, ‘দুই দিন টাইম দিলাম।’

মনিরুজ্জামান আবার লেখেন, ‘ওকে ভাই।’

এরপর মেহেদী মেসেঞ্জারে মনিরুজ্জামানকে ১৬ তম ব্যাচের মিজানের (এই মামলায় গ্রেপ্তার ও আবরারের রুমমেট) সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন।

মেহেদী লেখেন, ‘দরকারে ১৬ ব্যাচের মিজানের সাথে কথা বলিস। ও আরও কিছু ইনফরমেশন দেবে শিবির ইনভলভমেন্টের বিষয়ে।’

এর পরের দিন রোববার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে মনিরুজ্জামান মনির মেসেঞ্জারে ওই গ্রুপে লেখেন, ‘নিচে নাম সবাই।’ 

এরপর শাহীন (পুরো পরিচয় জানা যায়নি) লেখেন, ‘ওকে ভাই।’
শওকত (পুরো পরিচয় জানা যায়নি) লেখেন, ‘ওকে ভাই।’

বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবীন (ফাইল ছবি)

মেসেঞ্জারে আবু নওশাদ সাকিব (পুরো পরিচয় জানা যায়নি) নামের বুয়েট ছাত্র লেখেন, ‘আবরার ফাহাদ কী হলে আছে?’
জবাবে শামসুল (এই মামলায় গ্রেপ্তার) লেখেন, ‘হ ভাই। ২০১১ তে’। তখন নওশাদ লেখেন, ‘২০১১ তে আছে।’

মেসেঞ্জার গ্রুপে রাত ১টা ২৬ মিনিটে একজন (নাম পড়া যায়নি) লেখেন, ‘আবরার ফাহাদকে ধরছিলি তোরা?’

জবাবে ইফতি মোশাররফ (আবরারকে হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন) ফেসবুক মেসেঞ্জারে লেখেন, ‘হ।’

এরপর একজন (নাম পড়া যায়নি) লেখেন, ‘বের করসস।’

জবাবে মোশাররফ লেখেন, ‘কী? হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি?’

একজন (নাম পড়া যায়নি) লেখেন, ‘স্বীকার করলে তো বের করে দেওয়া উচিত।’

জবাবে ইফতি মোশাররফ লেখেন, আবরার ফাহাদ মরে যাচ্ছে। 

ইফতি লেখেন, ‘মরে যাচ্ছে। মাইর বেশি হয়ে গেছে।’

আবরার ফাহাদকে যে কক্ষে (২০১১) ফেলে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সেই কক্ষের একজন হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা ইফতি মোশাররফ।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে। রোববার রাত ৮টার দিকে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com