ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন ও জরুরি বিষয় শুনানির নির্দেশ

0

করোনার সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি চলাকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে অধস্তন আদালতে জরুরি জামিন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ শুনানির জন্য সারা দেশের অধস্তন আদালতের প্রতি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া উচ্চ আদালতেও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে জরুরি বিষয়সমূহ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের জন্য পৃথক তিনটি বেঞ্চ এবং আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে রবিবার এ সংক্রান্ত পৃথক নির্দেশনা জারি করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।

এই নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীকাল (সোমবার) থেকেই অধস্তন আদালতে এবং হাইকোর্ট বিভাগে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।

এর আগে শনিবার আদালতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ জারি করা হয়।

অধ্যাদেশের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানী কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যে কোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ৫ ধারার অধীনে জারিকৃত প্রাকটিস নির্দেশনা সাপেক্ষে, অডিও, ভিডিও বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে যে কোনো মামলার বিচার বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় প্রদান করতে পারবে।

৩(২) উপধারায় বলা হয়েছে, উপধারা-১ এর অধীনে অডিও, ভিডিও বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানী কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। আর অধ্যাদেশের ৫ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগ থেকে প্রাকটিস ডাইরেকশন দেওয়ার কথা বলা হয়।

সে অনুযায়ী আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফুলকোর্ট সভায় আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০-এর আওতায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রুল সংশোধন কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রকটিস ডাইরেকশনের অনুমোদন দেয়া হয়।

এছাড়া অধ্যাদেশের ধারা-৫ এ পদত্ত ক্ষমতাবলে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে অধস্তন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রাকটিস ডাইরেকশনেরও অনুমদোন মেলে ফুলকোর্টে। এসব প্রাকটিস ডাউরেকশন আজ সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এদিকে, আদালতের ছুটি চলাকালে জরুরি জামিন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিষ্পত্তির জন্য নিম্ন আদালতের প্রতি আদেশ দিয়ে রোববার সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসপনা জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস রোগ কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ রোধ মোকাবেলা এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সকল আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছুটি চলাকালে (সাপ্তাহিক ও বর্ষপুঞ্জিতে উল্লেখিত ছুটি ব্যতীত) বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ, শিশু আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে/ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এবং হাইকোর্ট কর্তৃক জারিকৃত বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা অনুসরণ করে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া সাধারণ ছুটি চলাকালীন ও অবকাশকালীন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগে জরুরি বিষয়সমূহ নিষ্পত্তির জন্য তিনটি পৃথক বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।

এর মধ্যে বিচারপতি মো. ওবায়দুল হাসানকে অতীব জরুরি সকল প্রকার রিট ও দেওয়ানী মোশন, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমকে অতীব জরুরী সকল প্রকার ফৌজদারি মোশন ও এ সংক্রান্ত জামিন শুনানি এবং বিচারপতি মো. খুরশীদ আলম সরকারকে আদিম অধিক্ষেত্রাধীন অতীব জরুরী বিষয়সমূহ শুনানির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানকে চেম্বার বিচারপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এর আগে ২৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সভায় ভার্চুয়াল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক সংস্কারসংক্রান্ত বিশেষ কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

এরপর প্রধান বিচারপতি এ-সংক্রান্ত আইনি জটিলতাগুলো দূরীকরণে উদ্যোগ নেন।

পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার (৭মে) ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি করতে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর শনিবার এই অধ্যাদেশ জারি হয়।

সূত্র : ইউএনবি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com