লকডাউন নিয়ে সরকারের স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী : ন্যাপ
সরকার একদিকে সাধারণ ছুটি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে লকডাউন ক্রমান্বয়ে শিথিল করে শপিং মল, দোকানপাট খোলার মধ্য দিয়ে সবকিছু প্রায় উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকারের স্ববিরোধী সিদ্ধান্তগুলো তীরে এসে তরি ডোবার শামিল, অবিবেচনাপ্রসূত ও আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)।
শনিবার (৯ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, সরকারি রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়েছে, করোনায় লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। জাতিসংঘের আশঙ্কা অনেক বেশি। এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, জনগণ সচেতন না হলে বিধ্বংসী হতে পারে এই পরিস্থিতি। ফলে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন এভাবে সবকিছু খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেছেন, এ বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ শোনা হবে। তাহলে ঘোড়ার আগে গাড়িজুড়ে দেয়া কেন? বিশেষজ্ঞ কমিটিকেও স্পষ্ট করে জানাতে হবে তারা এ ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন কি না।
নেতৃদ্বয় বলেন, সরকার সবাইকে অবাক করে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট খুলে দেয়াসহ অনেক কিছুই খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানাল। প্রশ্ন হলো- শর্তগুলো যে পালিত হবে, তার গ্যারান্টি কী? যে দেশের মানুষজন সহজে আইন মানতে চায় না, সেদেশে শর্ত মানবে কী? তাছাড়া শর্ত দিয়ে তো কাউকে দায়িত্বশীল করা যায় না। এটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে, নিরাপদ দূরত্বে বসে শুধু চিন্তাই করা যায়, বাস্তবতা অনেক কঠিন। ইতিমধ্যে বদলে গেছে ঢাকার চিত্র। গণপরিবহন ছাড়া অন্য সব যানবাহন রাস্তায়। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নেয়ার সময় এসে গেছে। ছুটি শিথিল করার খবর প্রচারের পর গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ন্যাপ নেতৃদ্বয় বলেন, মনে হচ্ছে সরকার টাইম বোমার উপর বসে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। করোনার কারণে অর্থনীতিকে সচল করার যে যুক্তি আনা হচ্ছে তাও মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ যে সক্ষম ও দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে লন্ডনের ‘দি ইকনোমিস্ট’ পত্রিকা সে রকমই দাবি করেছে। অন্যদিকে বিশ্বে এমন পরিস্থিতি হয়নি যে বাংলাদেশ পোশাকশিল্প তার বাজার হারাবে। ঈদের এক বছরের ব্যবসার জন্য শপিংমলগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে না।
তারা বলেন, দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের কঠিন সময়েও ঈদ উদযাপন করেছে। বেঁচে থাকলে অনেক ঈদ আসবে। কিন্তু, একজন আক্রান্ত হলে গোটা পরিবারের ওপর নেমে আসে অন্ধকার। আজকের নয়, দূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে। এই অদৃশ্য ভাইরাসের তো কোনো রঙ নেই। লাখ লাখ মানুষ যদি এতে আক্রান্ত হয়ে যায়? ইতিমধ্যেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তখন কী হবে? নাকি দেখা যাক কী হয় এই নীতি বেছে নিয়েছে সরকার। যে বাঁচে-বাঁচবে এই নীতি নিশ্চয় সরকার গ্রহণ করে নাই।
নেতৃদ্বয় বলেন, সরকার ও দেশবাসীকে মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। সবারই একদিন বিনাশ হবে। করোনাও একদিন বিদায় নেবে। কিন্তু, সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ও জনগণের আবেগের কারণে যদি ভয়াবহ কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে কেউ এর দায় থেকে মুক্তি পাবে না। ঐক্যবদ্ধভাবেই দলীয় রাজনীতি ও আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে করোনা নামক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেই তা মোকাবিলা করতে হবে।