গণবিরোধী ডিজিটাল আইন বাতিল করতে হবে: ফখরুল
করোনা মহামারির সময়ে সারা দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক ‘অপব্যবহার’ চলছে অভিযোগ করে অবিলম্বে গণবিরোধী এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৯ মে) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সুস্পষ্ট ভাষায় সরকারকে জানাতে চায়, বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেবল সরকারকে জনরোষের আগুন থেকে রক্ষার জন্যই অপব্যবহার হচ্ছে। এই মুহূর্তেই রাষ্ট্রের এই অন্যায় বন্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই গণবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে। আমরা চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির সময়ে সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগ করে গ্রেফতার ও হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত সকল ‘বিবেকের বন্দি’ বা ‘প্রিজনার্স অফ কনসায়েনস’সহ সকল রাজবন্দি, আদালত পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে না খোলা পর্যন্ত হত্যা-ধর্ষণসহ জঘন্য অপরাধ ছাড়া সকল প্রকার গ্রেফতার বন্ধ রাখা অথবা বিকল্প হিসেবে গ্রেফতারকৃতদের আদালত খোলার পর আত্মসমর্পণের শর্তে মুজলেকায় মুক্তি, কারাবন্দি লঘু অপরাধে ও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতারসহ বয়স্ক ও মহিলা বন্দি, দলের সিনিয়র নেতা আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর, ছাত্র নেতা ইসহাক সরকার, শেরপুর জেলা নেতা হয়রত আলীসহ দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকা নেতাদের মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
একইসঙ্গে সকল কারা কর্মকর্তা ও কারা রক্ষীদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা এবং সংক্রিমতদের যথাযথ চিকিতসার দাবিও জানান তিনি।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নতুন করে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মানুষজন গ্রেপ্তারের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ১দেশে একটি কার্যকরী মানহানি আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতন ও হয়রানি উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকেই বার বার ব্যবহার করছে সরকার। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে পেছনে হাতমোড়া অবস্থায় হ্যান্ডকাফ পড়া সাংবাদিকের(শফিকুল ইসলাম কাজল) ওই ছবিসহ সংবাদ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকার কিভাবে সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চলছে তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার তো দূর থাকুক মানুষ তার কষ্টের কথাও যাতে ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশ করতে না পারে তার জন্য একের পর এক পরিপত্র জারি করে চলেছে সরকার। বিটিআরসির মতো একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিণত করেছে ডিজিটাল জগতে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠার প্রধান পুলিশি প্রতিষ্ঠানে। শুধু বিএনপি নয়, সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদপত্র সম্পাদকদের সম্মিলিত সংগঠনও ওই গণবিরোধী আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বার। ইতোমধ্যে ৭ জন রাষ্ট্রদূত তারাও টুইটারের মাধ্যমে এই গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে বলেছেন সরকারকে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হরদম গ্রেফতার করা হচ্ছে ও আতংকের মধ্যে রাখা হয়েছে। অথচ ত্রাণের চাল চোর ও গম চোররা নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং ফ্যাসিবাদীঅ চরিত্রে মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের কৃতিত্ব ফলাওকারী এই সরকার নিজেই দেশের মানুষের ডিজিটাল অধিকার-বিনাশী দৈত্য রূপে আর্ভিভূত হয়েছে।’
‘দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতেই কী পরিপত্র জারি’- এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের জারিকৃত পরিপত্রগুলো কী রকম ডিকটেটোরিয়াল চিন্তা করা যায় না। এখন চুরি হচ্ছে এক জায়গায়, চাল চুরি হচ্ছে, গম চুরি হচ্ছে, সোয়াবিন তেল চুরি হচ্ছে, রিলিফ চুরি হচ্ছে –এসব সম্পর্কে যদি লেখতে যান তাহলে কি সেটা অন্যায় হবে? সত্য উৎঘাটন করাই তো সাংবাদিকদের কাজ।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের আইন করে, এই ধরনের পরিপত্র জারি করে শুধুমাত্র দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এখন যে প্রশ্নটা এসে যায় যে, সরকার এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত নীরব কেনো? আর যারা এসব তুলে ধরছে, কথা বলছে তাদের ওপর সরকার দমনপীড়ন চালাচ্ছে কেনো? এই ক্ষেত্রে সরকারের নিশ্চয়ই এখানে কোনো দুর্বলতা আছে যেকারণে তারা প্রশ্রয় দিয়ে বেড়াচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই যে সত্য খবর লুকানোর কারণটা কী, হাইড করার কারণটা কী? কেনো এই ধরণের দমন-নির্যাতন চলছে? তার অর্থ সত্য কথা যাতে বেরিয়ে না আসে। এটা কার স্বার্থে যাচ্ছে? সরকারের স্বার্থে কিন্তু যাচ্ছে না আল্টিমেটলি।’
তিনি বলেন, ‘এই সত্য গোপন করার ফলে ইনফর্ম না হওয়ায় সেই কাজগুলো করতে পারবে না। এমনিতে তো বিচ্ছিন্ন সবাই। তার পরে যদি সোশ্যাল মিডিয়ার খবরগুলো যদি না পায় তাহলে খবর জানবে কোত্থেকে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।