করোনার শঙ্কা : কিডনি রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ
মোটামুটি কিডনির অসুখে আক্রান্তদের তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে— প্রথমত, যাদের কিডনির অসুখের জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। দ্বিতীয়ত, যাদের নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হয়। তৃতীয়ত, যাদের ইতিমধ্যেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এবার এই তিন ধরনের কিডনি রোগীদের করোনা মোকাবিলায় কী করা উচিত, তা জেনে নেওয়া যাক। এক্ষেত্রে শেষ পর্যায়ের রোগী থেকে শুরু করা হল—
কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে
কিডনির অসুখে আক্রান্তদের মধ্যে করোনা থেকে সর্বোচ্চ সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কিডনি প্রতিস্থাপিত হওয়া রোগীদের থাকে। কারণ এই ধরনের রোগীকে সুস্থ থাকার স্বার্থে রোজই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর ওষুধ খেতে হয়। তাই তাদের স্বভাবতই ইমিউনিটি একদমই কম থাকে। এমন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হলে সমস্যা যে খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে তা আর আলাদা করে বলতে হবে না। তাই এই রোগীদের রোগ প্রতিরোধেই বেশি জোর দিতে হবে।
তবে কোনো কারণে করোনা আক্রান্ত হলেও অতিরিক্ত আতঙ্কের প্রয়োজন নেই। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের নজরে আনুন।
এই রোগী করোনা আক্রান্ত হলে নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ মতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে আনার ওষুধে পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি নির্দেশিকা অনুযায়ী অন্যান্য চিকিৎসাও চলবে।
ডায়ালিসিস রোগী
ডায়ালিসিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কম থাকে। ফলে এই ধরনের রোগীরও করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। তাই রোগ প্রতিরোধে সবরকম ব্যবস্থা নিতেই হবে।
যেকোনো অবস্থায় এই রোগীদের নিয়মিত ডায়ালিসিস করে যেতেই হবে। অন্যথায় রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
ডায়ালিসিস রোগীদের নিজেকেই সতর্ক থাকতে হবে। তাদের জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো অসুবিধে দেখা দিলে সরাসরি চিকিৎসককে বলতে হবে।
আবার অনেক সময় ডায়ালিসিস রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তার শরীরে রোগের লক্ষণ দেখা না দিতেও পারে। তবে এই ধরনের অ্যাসিম্পটোম্যাটিক কেরিয়ারের মাধ্যমেও রোগ ছড়াতে পারে। তাই ডায়ালিসিস রোগীর শরীরে করোনার লক্ষণ থাকুক না থাকুক অন্য কোথাও থেকে ফেরার ইতিহাস থাকলে, কোনো করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসককে আগেভাগে জানাতে হবে।
কোনো করোনা আক্রান্ত রোগীকে বা করোনা সন্দেহভাজন রোগীকে নির্দিষ্ট হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে ডায়ালিসিস করতে হবে। পাশাপাশি অন্য চিকিৎসাও চলবে গাইডলাইন মেনে।
কিডনির অসুখের জন্য ওষুধ খেতে হয়
কিডনির অসুখে ভোগা মানুষের মধ্যে সিংহভাগই এই শ্রেণীর। এক্ষেত্রে কিডনির অসুখের পাশাপাশি বেশিরভাগ রোগীই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য সমস্যায় ভোগেন। তাই এমন রোগীরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেকটাই বেশি। এক্ষেত্রে অন্যান্য সকলের মতো এদেরও রোগ প্রতিরোধ করতে হবে।
এই রোগীদের নিয়মিত কিডনি এবং অন্যান্য রোগের ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।
বিদেশে গিয়ে থাকলে, কোনো করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকলে, জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
করোনা আক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট প্রটোকল মেনে চিকিৎসা চলবে।
কিডনি প্রতিস্থাপন সার্জারি করার প্রয়োজন হলে
করোনার আবহেও অনেকের কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হতে পারে। এই অবস্থায় বেশকিছু সতর্কতা নেয়ার পরই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।
আপাৎকালীন পরিস্থিতি দেখা না দিলে এখন কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে না।
কিডনির জীবিত দাতা নির্বাচনের সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে, জ্বর-সর্দি-কাশি হয়েছে, কোডিড টেস্ট করা নেই ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডোনার নেয়া যাবে না।
মৃত ব্যক্তির থেকে কিডনি নেয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া দরকার। এক্ষেত্রেও মৃতের করোনা আক্রান্ত হওয়ার মতো সন্দেহ দেখা দিলে কিডনি নেয়া হবে না।
যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং সর্বাধিক প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানেই ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধে
কিডনির অসুখে ভোগা রোগীরা এই নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। একান্তই বেরতে হলে মাস্ক পরে বাইরে যান এবং অন্যান্য সতর্কতা গ্রহণ করুন।
নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন।
জ্বর, সর্দি, কাশির লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ফেলে রাখবেন না। নিজের ভালো নিজে বুঝুন।
লেখক ডাঃ পিনাকী মুখোপাধ্যায়