দেশে করোনায় আক্রান্তের মধ্যে ৫ শতাংশের বেশি চিকিৎসক
কোভিড-১৯ রোগে চিকিৎসকদের আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। বলা চলে খুবই বিপজ্জনক মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকেরা। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসকেরা ৫ শতাংশের বেশি। উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪২৫ জন।
যে হারে চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন, সামনের দিনগুলোতে সাধারণের মধ্যে রোগী আরো বাড়লে চিকিৎসকেরা আরো বেশি হারে আক্রান্ত হতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকেরা বলছেন। এখনি এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি শুধুই খারাপের দিকে যেতে থাকবে।
আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। এদের একজন হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা: কর্নেল (অব) মনিরুজ্জামান, অন্য একজন মেডিসিন ও কার্ডিওলজির সহকারী অধ্যাপক মো: মঈন উদ্দিন।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরামের (বিডিএফ) তথ্য অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশের ৬২৪ জন চিকিৎসক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য দিকে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর) জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ৬০২ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছে। বিডিএফের চেয়ারম্যান ডা: পাভেল রকি জানিয়েছেন গতকাল জানিয়েছেন, সারা দেশে যে ৬২৪ চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। ঢাকা বিভাগেই ৪৩১ জন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানীর চিকিৎসকেরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এফডিএসআর বলছে, আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪৩২ জন, খুলনায় ৪৪ জন, ময়মনসিংহে ৬১, রংপুরে ১০, সিলেটে ২৫, বরিশালে ৯ এবং রাজশাহী বিভাগে ৩ জন ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি রাজধানীর হৃদরোগ হাসপাতালে একদিনে ২৯ চিকিৎসকের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার প্রায় সবগুলো বড় বড় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন বলে ্ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটে আক্রান্তদের মধ্যে একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুইজন সহকারী অধ্যাপক, একজন মেডিক্যাল অফিসার এবং দুইজন রেসিডেন্ট চিকিৎসক (শিক্ষার্থী) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার করোনা আক্রান্ত একজন রোগী নিউরোলজিতে ভর্তি হয়েছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জরুরি ভিত্তিতে তার ব্রেইনে অপারেশনের প্রয়োজন হয় রোগীকে বাঁচানোর স্বার্থে। ইতোমধ্যে চিকিৎসকেরা জেনে যান যে, অপারেশনের ওই রোগীটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। পরে নিউরো সায়েন্সের ওই চিকিৎসকদের করোনা পরীক্ষা করা হলে ছয়জনের রিপোর্ট পজিটিভ হয়। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, অপারেশনের ওই রোগীকে মুগদা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং ছয় চিকিৎসক নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
এটা ছাড়া রাজধানীর হৃদরোগ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসিও আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন।
পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চললে চিকিৎসকদের মধ্যে আক্রান্তের হার কমে যাবে। নিপসমের ভাইরোলজির সাবেক অধ্যাপক ও ইউনিসেফের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা: বে-নজীর আহমেদ জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অথবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনাগুলো মেনে চলা উচিত চিকিৎসকদের। তিনি প্রস্তাব করেন, প্রতিটি হাসপাতালে একজন পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে একটি ইনফেকশনা কন্ট্রোল টিম থাকা উচিত যারা হাসপাতালে সংক্রমণ মনিটরিং করবেন এবং যাচাই করে ঘাটতিগুলো পূরণ করবেন। এটা করা হলে চিকিৎসকদের মধ্যে সংক্রমণ কমে যাবে। সর্বোপরি চিকিৎসকদেরই সাবধানে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।