ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি সম্পাদক পরিষদের
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট ও লেখকের মুক্তি চেয়েছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে এই আইন বাতিলের দাবিও জানিয়েছে দেশের সম্পাদকদের এ সংগঠন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ মে) সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হবে এই আশঙ্কায় সম্পাদক পরিষদ শুরু থেকেই আইনটির বিরোধিতা করেছিল।সম্পাদক পরিষদ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে অযৌক্তিকভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট ও লেখককে অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার করার ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করছি। গ্রেপ্তারের আগে অভিযোগের যৌক্তিকতার বিষয়ে কোনো কথা বলা হচ্ছে না।’ ‘ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়া’, ‘গুজব ছড়ানো’, অথবা ‘সরকারের সমালোচনা’ করার মতো কারণকে এখন সাংবাদিকদের জেলে ভরার জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া যেকোনো মামলা হওয়া মানেই বেশিরভাগক্ষেত্রে এখন গ্রেপ্তার হওয়া। সম্প্রতি ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সাংসদ, জেলা প্রশাসন, ক্ষমতাসীন লোকজনের নামে সামান্য সমালোচনার কারণে সম্প্রতি মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঐতিহ্যগতভাবে সাংসদরা সবসময় মুক্ত গণমাধ্যম, মুক্ত চিন্তা ও সমালোচনার পাশে বরাবর দাঁড়িয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁদেরই কয়েকজন এখন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের পক্ষে। বিদ্যমান মানহানির মামলার পরিবর্তে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় পরিষ্কার আগ্রহ প্রমাণ করে, সুবিচার পাওয়াটা তাঁদের মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং সাংবাদিকদেও ভয় দেখানো ও হয়রানি করার ইচ্ছেটাই এখন মূল।’
সম্পাদক পরিষদ মনে করে, ‘সংবাদমাধ্যমের সহজাত দায়িত্ব হলো দুর্নীতি, অনিয়ম প্রকাশ করা এবং প্রশাসনের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া। আর যখন কিনা মহামারি ও মহামারি পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, তখন এই দায়িত্ব পালন আরও জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দমনের অস্ত্র হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার হতে পারে এই আশঙ্কায় একদম শুরু থেকেই সম্পাদক পরিষদ এই আইনের বিরোধিতা করে আসছে। আমাদের সেই শঙ্কা এখন গণমাধ্যমের জন্য দুঃস্বপ্নের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ‘আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক এই মামলাগুলোয় সাংবাদিকদের অভিযুক্ত ও তাদের গ্রেপ্তার করা সংবাদ মাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি প্রকাশ্য হুমকি। আমরা অনতিবিলম্বে সব সাংবাদিকের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
মহামারি এবং মহামারিজনিত কারণে অর্থনৈতিক যে প্রতিবন্ধকতাগুলো দেশের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তার মোকাবিলায় গোটা জাতিকে একতাবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এমন অবস্থান ও সাংবাদিকদের হরদম গ্রেপ্তার একতাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টাকে কেবল ক্ষতিগ্রস্তই করবে বলে উল্লেখ করেছে সম্পাদক পরিষদ।