পরিবহন শ্রমিক কল্যাণে তোলা চাঁদার টাকাগুলো কোথায়?
সারা দেশে চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে আয়-রোজগার বন্ধ থাকা পরিবহন শ্রমিকদের পাশে নেই তাদের নামে ও চাঁদায় গড়ে উঠা সমিতি-ফেডারেশনগুলো। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ‘পরিবহন শ্রমিক কল্যাণে তোলা চাঁদার টাকাগুলি কোথায়?’
শুক্রবার (৮মে) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের আহ্বায়ক এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা ও সমন্বয়ক মো. এহসিন ভুইয়া এসব কথা বলেন।
নেতৃত্রয় বলেন, দৈনিক বাস-ট্রাক, ছোট গাড়িপ্রতি আনুপাতিক হারে চাঁদা আদায় করে থাকে পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনগুলো। এর বাইরেও রয়েছে মাসিক চাঁদা। টার্মিনাল ও অঞ্চলকেন্দ্রিক শ্রমিক-মালিক সমিতি, কল্যাণ তহবিল ইত্যাদি। অথচ, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে করোনার এই ভয়াবহ দু:সময়ে সেই টাকা শ্রমিকদেও কল্যাণে ব্যবহৃদ হচ্ছে না। শ্রমিকদের কাছ থেকে তোলা চাঁদার কোটি কোটি টাকা এসব সমিতি ও ফেডারেশন নেতারা নিয়মিত জমা নিলেও এ টাকার কোনো খবর কেউ জানে বলে মনে হয় না। যাদের কল্যাণের নামে এসব চাঁদা তোলা হয়, তাদের এই কঠিন দিনে সেই সকল সংগঠনগুলোর কোন খবর নাই। তাই সাধারন শ্রমিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, শ্রমিকদের কল্যাণের নামে তোলা মোটা অঙ্কের চাঁদার টাকা যায় কোথায়?
তারা বলেন, দৈনিক আয়নির্ভর এই সাধারণ অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন, পাশাপাশি তাদের চাঁদার কোটি কোটি টাকা হিসাব-নিকাশ করে তা তাদের কল্যাণে ব্যয়ের কার্যকর উদ্যোগ নেয়াও সরকারের দায়িত্ব। যদি কথিত নেতারা শ্রমিক কল্যাণের অর্থ তছরুপ করে থাকে, তবে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনাও জরুরি।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, বর্তমান অবস্থায় প্রমানিত হচ্ছে যে, শ্রমিকদের মোটা অঙ্কের টাকাই যে কেবল আত্মসাৎ হচ্ছে শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় সরকারের ও আদালতের জনহিতকর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আটকে দেয়ার জন্যও অবুঝ শ্রমিকদের ব্যবহার করা হলেও তাদের দুর্দিনে সেই সকল স্বার্থবাজ, সুযোগসন্ধানী মালিক ও শ্রমিক নেতারা তাদের পাশে নেই। অথচ তাদের জন্য ‘সোনার ডিম পাড়া’ এসব শ্রমিকের অসহায় মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানো তাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক, যাত্রী তথা জনসাধারণ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সরকারকে জিম্মি করা শ্রমিক-মালিক নেতা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এবং চাঁদার টাকা লোপাটকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনার এখনই সময়। এছাড়াও শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর কল্যাণ তহবিলের টাকা বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে শ্রমিকদের জন্য ব্যবহার করা যায়, সে পথও খুজে বের করা প্রয়োজন।
নেতৃত্রয় বলেন, শ্রমিক কল্যাণে তোলা চাঁদার টাকা মালিক-শ্রমিক নেতা, রাজনৈতিক ও সংশ্লিষ্ট অসাধুদের ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার মতো দুর্নীতি, অসততা মেনে নেয়া যায় না, মেনে নেয়া উচিতও নয়। এই দুঃসময়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে তোলা টাকা মালিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যবহার হবে না এটা দুর্ভাগ্যজনক।
সড়কে শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা রক্ষায় মালিক-শ্রমিক নেতা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরব হওয়া ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, একই সাথে শ্রমিকদের চাঁদার অর্থ কিভাবে হরিলুট হয়েছে, তা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি তহবিলে থাকা অর্থ শ্রমিক কল্যাণে ব্যয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা সরকারের উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।